ল্যুভরে প্রাসাদ মিউজিয়ামের বিশাল সিঁড়ির (Escalier Daru) ঠিক মুখে নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়ানো আট ফুট উচ্চতার , মস্তক হীন, ডানা যুক্ত মার্বেল পাথরে তৈরি এক ভাস্কর্য হাজার টুরিস্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই নেয় – সকালের দিকে প্রচণ্ড ভিড়ের ঠেলাঠেলির জন্যে মূর্তিটির একদম সামনে যাওয়াই যায় না, একটু দুপুরের দিকে ভিড় হালকা হয়।
ল্যুভরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই স্ট্যাচুটি 2nd-century BC তে তৈরি গ্রীক দেবী Nike এর স্ট্যাচু, নাম Winged Victory of Samothrace বা Nike of Samothrace। গ্রীসের দ্বীপ Samothrace থেকে উদ্ধার করা, বহু প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার এক অপূর্ব মাস্টারপিস এই স্ট্যাচু। মূর্তিটি মস্তকহীন বলেই হয়তো, এই স্ট্যাচুটিকে ঘিরে আরও রহস্য, কৌতূহল দানা বেঁধেছে, আকর্ষণ বেড়েছে।
অনুমান করা হয়, গ্রীক দেবীর এই স্ট্যাচুটি সমুদ্রের পাশে দাঁড়ানো ছিল কল্পনা করেই তৈরি হয়েছিল, আর এই স্ট্যাচু শুধুমাত্র গ্রীক দেবী Nike এর উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি হয় নি, সমুদ্র যুদ্ধের বিজয় ঘোষণার জন্যেও সৃষ্টি হয়েছে। পাথুরে স্ট্যাচুটির দেহের দু’পাশে মেলে দেওয়া খোলা ডানার মধ্যে যেন থমকে আছে যুদ্ধ জয়ের প্রশান্তি। আর উড়ন্ত ডানার সুক্ষতায় ও দেহের ভঙ্গিমায় তীব্র গতি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি সেই তীব্র গতি এসে হঠাৎ স্থির হয়ে যাওয়াও প্রকাশ পেয়েছে।
স্ট্যাচুটিকে জড়িয়ে আছে যে পাথুরে কাপড় – সমুদ্রের তীব্র হাওয়ায় সেই পাথুরে কাপড়ের এলোমেলো উড়ে যাওয়ার সুক্ষতাও প্রকাশ পেয়েছে এই স্ট্যাচুতে। অদ্ভুত এই স্ট্যাচুটির হাত ও মস্তক বহু সন্ধান করেও পাওয়া যায় নি। তবুও, এই স্ট্যাচুর ঐতিহাসিক আকর্ষণ কিন্তু এক বিন্দু কমে নি, ল্যুভরে মিউজিয়ামের এক বহু মূল্য শিল্প এই Nike of Samothrace।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঠিক আগে ল্যুভরে মিউজিয়ামের বহু শিল্প সংগ্রহ সরিয়ে নিয়ে ফ্রান্সের নানান জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই সময় বিশাল এই Nike of Samothrace কেও ল্যুভরে থেকে সরিয়ে নিয়ে প্যারিসের বাইরে Château de Valençay তে সযত্নে রাখা হয়েছিল। পরে যথারীতি আবার ল্যুভরে মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে ফরাসীদের আদরের স্ট্যাচু।
আজও প্রতিদিন ল্যুভরে মিউজিয়ামে এসে হাজার হাজার টুরিস্ট এই স্ট্যাচুর তীব্র গতি ও স্থবিরতার ভঙ্গিমাকে আশ্চর্য হয়ে দেখে। হয়তো বা ভাবে মানুষের কতোটা ধৈর্য, স্থিরতা, নিমগ্নতা, প্যাশন থাকলে পাথরের বুকে অনন্ত কালের জন্যে ফুটিয়ে তোলা যায় উড়ে যাওয়া ডানার সূক্ষ্মতা, পাথরে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা যায় উড়ন্ত ডানা, উড়ন্ত দেহের তীব্র গতি এসে স্থির হয়ে যাওয়ার ঠিক আগের ভঙ্গিমা, পাথরের বুকে জাগিয়ে দেওয়া যায় সমুদ্রের দুরন্ত হাওয়ার চঞ্চলতা?
চমৎকার একটি পোস্ট
ধন্যবাদ।