অতীতের এক সময়ে ল্যুভরে ছিল দুর্গ, পরে পরিণত হয়েছিল ফরাসী রাজ প্রাসাদে, আর ল্যুভরে প্রাসাদে সেই রাজ পরিবারের রাজকীয় জীবন যাপনের চমক, জাঁক জমক, ঐশ্বর্য, বৈভবের আঁচ তো আজকের ল্যুভরে মিউজিয়ামের গায়ে গায়ে জড়িয়ে থাকবেই – আর মেঝে থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত সেই সোনালি স্বপ্ন ময় ঐশ্বর্য জড়ানো ঘরে ঢুকে আজকের সাধারণ মানুষ তো আশ্চর্যান্বিত হবেই, চমকিত হবে।
আর টুরিস্টদের কাছে, ফ্রান্সের অতীত সময়ের বৈভব পূর্ণ সোনালি জীবন যাপনের ছবি আরও স্পষ্ট হয় ল্যুভরে মিউজিয়ামের Galerie d’Apollon এ ঢুকে, আবার অনেকে এই হলকে Petite Galerie নামেও জানে। এই বিশাল হলে ঢুকেই, দেওয়াল থেকে শুরু করে ছাদ জোড়া, সোনালি ফ্রেমে মোড়ানো, অপূর্ব সব ছবির সঙ্গে পরিচয় হয়। ঐশ্বর্যময় এই রাজকীয় ঘর ছিল Louis XIV এর প্রথম রয়্যাল গ্যালারী আর এই হলের অনুকরণেই ভারসেই প্রাসাদের Hall of Mirrors তৈরি হয়েছিল।
আবার, ল্যুভরে প্রাসাদের এই অলংকৃত ঘরের সঙ্গে মানানসই সংগ্রহও এই ঘরে স্থান পেয়েছে। ফরাসী রাজমুকুট, তরবারি, রাজমুকুটের নানা রত্ন, রানীর অলংকার, হীরা, চুনি, পান্না, মুক্তো সবই এই ঘরে সযত্নে, সুরক্ষিত ভাবে সাজানো। শোণা যায়, ফরাসী ইতিহাসের নানা সময়ের উত্থান পতনের সময় বহু রাজ রত্ন, রাজ অলংকার হারিয়েও গেছে।
যাইহোক, এখানে এসে মনে হয় – এই ঘর নিজেই তো এক অলংকার, এখানে মানুষকে যত না রাজ অলংকারের শৌর্য আকর্ষণ করে, তেমনি এই হলের সোনালি দেওয়াল, সোনালি কোণও টুরিস্টদের মনোযোগ কেড়ে নেয়।
এই গ্যালারীর একদিকে বিশাল ফরাসী জানালা দিয়ে সিয়েন নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। আর সেই বিশাল জানালা দিয়ে শীতের দুপুরের তেড়ছা রোদ ঢুকে এই রাজকীয় প্রাসাদ ঘরকে যেন আরও উজ্জ্বল, আরও রাজকীয়, আরও মোহময় করে তোলে।
ল্যুভরে মিউজিয়ামকে তো ঠিক মিউজিয়াম বলা যায় না – এক মিউজিয়াম শহর বলা যায়, এক একটি ঘরে অতীতের এক এক সময়ের ঝলক, প্রাচীন ইতিহাসের এক একটি সময়ের, বিগত জীবন যাপনের ছাপ স্পষ্ট এখানে। বহু যুগের বহু মানুষের ধৈর্য, অধ্যবসায়, মগ্নতা, স্বপ্ন, শিল্প, সাধনার ইতিহাস যেন এখানে স্থান পেয়েছে – আর সেই অতীত মানুষের সৃষ্টি দেখতে দেখতে সময় গড়ায়।
ল্যুভরের অন্য ঘরের দিকে এগোই, পেছনে ফেলে আসি এক রূপকথা। অনন্ত সময়ের কতো সোনালি দুপুরের সোনালি রোদ, সোনালি অতীতের মায়াবী ঐশ্বর্যে জীয়ন কাঠি বুলিয়ে দেয়, রূপকথারা সব যেন জেগে ওঠে ল্যুভরের সেই ঘরে।