গথেনবার্গ শহর ছাড়িয়ে একটু দূরেই নর্থ সি র বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর দ্বীপ – দ্বীপ পুঞ্জ। গথেনবার্গ সিটি সেন্টার থেকে প্রথমে ট্রামে ফেরিঘাট, তারপর ছোট জাহাজ ধরে সিধে পৌঁছে যাওয়া যায় সেই দ্বীপ পুঞ্জের বেশীরভাগ দ্বীপে – অবশ্য আবহাওয়া ও সমুদ্রের মেজাজের উপরেও ছোট জাহাজ গুলোর চলাচল নির্ভর করে।
শীতে যখন সমুদ্রের উপরে বরফের স্তর ভাসে, আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়, অনেক দ্বীপেই তখন জাহাজ যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়, ফেরী ঘাট বন্ধ থাকে। তখন নাকি অনেকেই এই দ্বীপ গুলো ছেড়ে চলে যায়। অবশ্য, সামার ছাড়া অন্যান্য সময়েও এই দ্বীপ গুলোতে জনসংখ্যা খুবই কম।
যাইহোক, গথেনবার্গের দক্ষিণে সেই দ্বীপ পুঞ্জের এক দ্বীপ – ব্রানো (Brännö )। ছবির মতো দ্বীপে পা রেখেই মনে হল – এই কি নীললোহিতের সেই দিকশুন্যপুর?
ছোট এই দ্বীপের বাসিন্দা মাত্র আটশো, পশুপালন, চাষ আবাদ, পর্যটন, মাছ ধরাই এই দ্বীপের মানুষের অন্যতম জীবিকা। ছোট এই দ্বীপে ছোট্ট ক্যাফে থেকে শুরু করে হোটেল, দোকান, পোস্ট অফিস সবই আছে – ছবির মতো সাজানো।
ছোট এই দ্বীপের বাসিন্দাদের সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর যোগাযোগের মাধ্যম মনে হয় – চিঠি। দেখি, চিঠির অপেক্ষায় প্রতিটি বাড়ীর সামনে সুন্দর লেটারবক্স। বাড়ী গুলোর সামনের লেটার বক্স গুলোতে বাড়ীর বাসিন্দারা নিজস্ব শিল্পের পরিচয় দেয়। তাই, প্রতিটি বাড়ীর সামনে সুন্দর সাজানো লেটারবক্স গুলো সহজেই নজর কেড়ে নেয়।
অক্টোবরের সকালে দেখা সেই সকালের রৌদ্র স্নাত পরিছন্ন দ্বীপটি নাকি সামারে অনেক বদলে যায় – ব্যালে নাচ ও স্থানীয় নাচের উৎসব উপলক্ষে অনেকেই এই দ্বীপে আসে।
একদিকে উদার নর্থ সি আর একদিকে ব্রানো দ্বীপের সাজানো ছোট সুন্দর কাঠের বাড়ী, অক্টোবরের সকালে জনমানবহীন রাস্তা ঘাট, গাছে গাছে ফলে থাকা নানা ধরণের ফল, ঝকঝকে সোনালি সকালের রোদে বেড়ালের নিশ্চিন্ত রোদ পোহানোর আমেজ, থমকে যাওয়া সময়, নীল আকাশের ক্যানভাসে পেঁজা তুলোর পোঁচ, জন মানবহীন নির্জনতা চারিপাশে অথচ প্রতিটি বাড়ীর উঠোনে বাড়ীতে যত্নের ছাপ, সযত্নে ছাঁটা ঘাস, ঝোপ, চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। এই দ্বীপে কোন গাড়িও চলাচলও করে না, পায়ে হাঁটা বা সাইকেলই এই দ্বীপের প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা – সব মিলিয়ে সত্যি মনে হল, এই জায়গাই তবে দিকশুণ্যপুরের আসল ঠিকানা।