February 2009, Monte Carlo, Monaco
পৃথিবীর যে কোন দেশের সকালের খবরের কাগজে খুন, রাহাজানি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি স্নায়ু উত্তেজক অপ্রীতিকর ঘটনার খবর থাকেই, কিন্তু, পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ মোনাকোর সকালের খবরের কাগজে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা, কোন অপরাধের খবর থাকে না। ধনীলোকের এই দেশটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। অপরাধ মুক্ত দেশ এই মোনাকো। হাজার ক্যামেরার চোখ সর্বদা নজর রেখে চলেছে এই দেশের আনাচে কানাচে। সর্বদা কড়া পাহারাদার সদা সতর্ক। এই দেশে সমস্ত গাড়ির, এমনকি নতুন ঢোকা গাড়ির ও নাম্বার প্লেটের ফটো তুলে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান করা হয় ও দেশের সুরক্ষা ডেটাবেসে রাখা ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।
বিখ্যাত মন্টি কার্লো ক্যেসিনোর সামনে কয়েক মিটার পারকিং এলাকায় পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গাড়ি অবহেলায় পার্ক করা থাকে।
রোলস রয়েস, ফেরারি, এস্টন মারটিন, বুগাট্টি এইসব দামী গাড়ি একসঙ্গে পাশাপাশি এই মোনাকোতেই দেখা যায়।
তিনদিক দিয়ে ফ্রান্স ও একদিকে মেডিটেরিয়ান সমুদ্র দেশটিকে ঘিরে আছে। যদিও মোনাকোর রাজকুমারের নিজস্ব এক ছোট মিলিটারি আছে, ছোট্ট এই দেশটির মিলিটারি সুরক্ষার দ্বায়িত্ব ফ্রান্সের হাতে।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জায়গা মোনাকো। যেমন দামী জায়গা তেমনি ধনী এখানের বাসিন্দারা। পৃথিবীর সমস্ত মিলিয়নিয়ার, বিলিয়নিয়ার, হলিউডের সুপার স্টার এখানে বাড়ী কেনে, ছুটি কাটায়। কি করে পকেট সাইজ এই মোনাকো প্রিন্সিপালিটিতে এতো বড়লোকের একসঙ্গে বাসস্থান হল? কারণ একটাই- এই দেশ ট্যাক্স ফ্রি।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ঘন লোক বসতি এখানে। বিশাল হাইরাইজ বিল্ডিং এখানের পাহাড়ের গায়ে, সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। জানা যায়, এই সমস্ত হাইরাইজের ছোট এপার্টমেন্টে যারা থাকে সবাই মিলিয়নিয়ার বা বিলিয়নিয়ার।
শুধু কি স্থলেই বৈভব দেখা যায়? চোখ ঘুরিয়ে নীল মেদিটেরিয়ানে মন্টি কার্লো বন্দরের দিকে দেখলে হাজার ইয়াট চোখে পড়বে।
এই ইয়াট গুলো অসম্ভব দামী। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও বড় ইয়াট মোনাকোর সমুদ্রে ভাসে। মোনাকোর জলে স্থলে মিলিয়ন ডলারের ছড়াছড়ি। মন্টি কার্লো ক্যাসিনোয় খেলায় মিলিয়ন ডলার এক রাতেই উড়ে যায়।
মন্টি কার্লো ক্যাসিনোরও সুরক্ষা ব্যাবস্থা ভীষণ কড়া। মন্টি কার্লো ক্যাসিনোয় যারা খেলতে যায় তাদের সঙ্গে সঙ্গে ফটো তুলে মন্টি কার্লোর ক্যাসিনোর ডেটাবেসে রাখা হয়। এমনকি, সারা পৃথিবীর বড় ক্যাসিনোর নয়মিত গ্যাম্বলারদের ডেটাবেস মন্টি কার্লো ক্যাসিনোর ডেটাবেসে থাকে।
একবার আমেরিকার MIT র তিনজন ছাত্র তিন পাত্তি গ্যম্বলিংএ জেতার ফর্মুলা আবিষ্কার করে ফেলে ও লাস ভেগাসে প্রচুর টাকা জিতে নেয়। লাস ভেগাস কর্তৃপক্ষ ধরে ফেলে এই তিনজনকে এবং আমেরিকার সমস্ত ক্যাসিনোয় ওদের খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, এমনকি ঢুকতেই দেওয়া হত না। তারপর সেই তিনজন ইউরোপের ক্যাসিনোয় হানা দায়, অনেক টাকা জিতেও নেয় ইতালির অনেক ক্যাসিনোয়, কেউই ধরতে পারে নি। কিন্তু, মন্টি কার্লো ক্যাসিনোয় ঢোকা মাত্র ক্যাসিনোর সুরক্ষা কর্মী ডেটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেই তিনজনকে ধরে ফেলে, কারণ সেই তিন জিনিয়াস চাইলেই এক রাতে মন্টি কার্লো ক্যাসিনোকে পথে বসাতে পারতো।জিনিয়াস মগজের সঙ্গে তাল মেলানো তো আর সহজ নয়!
সে যাইহোক, পাহাড়ের গায়ে মেদিটেরিয়ান সমুদ্রের পাশে এই দেশটি প্রাকৃতিক ভাবে কিন্তু খুবই সুন্দর। সারা বছরই আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এখানে। ফেব্রুয়ারিতে এখানে ঠাণ্ডা খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারির সকালে মোনাকোর সুন্দর পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম প্রিন্সেস-এর বাগানে।
মোনাকোর বাস সার্ভিস খুব ভালো, কিন্তু বাস একদম খালি। চলে এলাম এক্সোটিক গার্ডেন ‘Jardin Exotique de Monaco’। খাড়া পাথুরে পাহাড় যেখানে মেডিটেরিয়ান সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে সেই খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে গড়ে উঠেছে এই এস্কোটিক গার্ডেন, বিশেষত ক্যাকটাস এই বাগানের মূল আকর্ষণ।
পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কয়েক লক্ষ প্রজাতির বিকট দর্শন ক্যাকটাস এই বাগানে আছে। ছোট্ট বোতাম আকৃতির ক্যাকটাস থেকে শুরু করে বিশালাকার ক্যাকটাস দেখা যায় এখানে।
এই এস্কোটিক গার্ডেনের অন্য দিকে আছে এক প্রাগৈতিহাসিক গুহা (the Observatory Cave) , যেখানে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। প্রায় আড়াই লক্ষ বছরের পুরনো মানুষের বাসস্থানের অস্তিত্ব পাওয়া যায় এই চুনা পাথরের পাহাড়ি গুহায়।
স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ যুক্ত উষ্ণ অন্ধকার বিশাল গুহার ভেতরে বিশেষজ্ঞ গাইড টুরিস্টদের নিয়ে যায় এক ঘণ্টা পরে পরে। প্রায় তিনশো সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে হয় এই গুহায়। এখনো অন্যান্য অংশে কাজ চলছে। বহু পুরনো এই গুহার ছাদ থেকে নানান আকৃতির stalagmites পাথর ঝুলে আছে। বেশিক্ষণ এখানে থাকলেই নাকি দমবন্ধ হতে পারে।
গুহার বাইরেই ঝকঝকে দিন চোখ ঝলসে দিল। এবার পুরো পাহাড়ি ক্যাকটাস বাগানে ঘুরে বাস ধরে চলে এলাম মন্টি কার্লো স্কোয়ার। ইউরোপের সবচেয়ে দামী ও প্রাণবন্ত এই স্কোয়ার।
ফেব্রুয়ারির ছোট দিন, শেষ হয়ে আসছে। একে একে রাস্তার লাইট জ্বলে উঠেছে। মেডিটেরিয়ানের বুকে ভাসমান ইয়াট গুলোতেও আলো জ্বলে উঠেছে, ঢেউ এর সঙ্গে এই আলো একটু কাঁপছে। সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে ঠাণ্ডা এক হাওয়া ঠাণ্ডা যেন একটু বাড়িয়ে দিল। এবার ফিরতে হবে। বাসে চলতে চলতে দূর থেকে সমুদ্র ও পাহাড়ের গায়ে মোনাকোর দীপমালা দেখতে দেখতে ফিরছি।
Shanti purno sundor chotto desh ta lekhar gune aro sundor hoeche….
Thank you, bhalo legeche jene khushi holam…
পিংব্যাকঃ সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ১০ টি দেশ, যেগুলি জানলে অবাক হবেন | JKCPBAJK Media
পিংব্যাকঃ সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ১০ টি দেশ, যেগুলো দেখলে চমকে যাবেন | JKCPBAJK Media