প্যারিসে গিয়ে আইফেল টাওয়ার সঙ্গে না নিয়ে বোধহয় পৃথিবীর কোন টুরিস্টই তার নিজের দেশে ফেরে না। বর্তমানে বিমানে ওজন নিয়ে যাওয়ার কড়াকড়ির মধ্যে মাঝারি মাপের লোহার এক আইফেল টাওয়ার যাই ওজন যোগ করুক না কেন, টুরিস্টরা কিন্তু হাল ছাড়ে না, নিদেনপক্ষে ছোট্ট এক আইফেল টাওয়ার সহ একটা চাবির রিং হলেও কেনে, আমরাও এর ব্যতিক্রম নই।
ইউরোপ ভ্রমনে পদে পদে দিনে দিনে, ভেনিসের রঙচঙে মুখোশ থেকে শুরু করে পিসার হেলানো টাওয়ার, রোমের কলোসিয়াম, নত্রে দামের সোনালি কয়েন, মিউনিখের ফ্রিজ ম্যাগনেট, লিসবনের লাকি মোরগ, পর্তুগালের ভিয়েনা দো কাস্তেলোর মোরগ আঁকা হাতে বোনা রুমাল, ফিনল্যান্ডের রেন ডিয়ারের শিং দিয়ে তৈরি বোটল ওপেনার, রিগার কাঠের তৈরি লাকি বোতাম, ইস্টোনিয়ার ফসিল পাথর ‘এম্বর’, বার্সিলোনার Sagrada Família র ফটো ফ্রেম – আরও কতো কি।
বহুদিন পরে দেখি কতোই যে সুভেনির এসে জড়ো হয়ে গেছে ঘরের কোণে, অথচ সত্যিই কি সেদিন সেই শহরে ঐ সমস্ত অদরকারী জিনিস কেনা জরুরি ছিল? অহেতুক ওজন বেড়ে যায়! উত্তর আসে, কেন সবাই তো কেনে।
আসলে মানুষ যখন কোথাও বেড়াতে যায়, সে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে, ছুটির মেজাজে বিচরণ করে, আর দৈনন্দিন জাঁতাকল যতই তাঁকে চেপে ধরে, মানুষ মনে মনে তার সেই ছুটির সময়েই থাকতে পছন্দ করে – তাই বোধহয় মানুষ ঐ সুভেনির কেনে, ভালো সময়কে সুভেনিরের আকারে রূপ দিতে চায়।
শুধু কি সুভেনিরই মানুষের ভ্রমণের সুখ স্মৃতিকে জাগ্রত করে? হঠাৎই, পুরনো জামার পকেটে দুব্রভনিক থেকে স্প্লিট যাওয়ার বাসের টিকিট, বা পুরনো কাগজের ভিড়ে ল্যুভরে মিউজিয়াম, ধ্বংস নগরী পম্পেই, বা ভারসেই প্যালেসে ঢোকার টিকিট ও লিফলেটও সেই সুখ স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে – তাই নানা দেশের নানান জায়গার টিকিট ও লিফলেট সংগ্রহ করাও সুভেনিরেরই অংশ। তাছাড়া, যে ভাবে সমস্ত জিনিস ইলেকট্রনিক ও অটোম্যাটিক হয়ে চলেছে, ইউরোপে কাগজের টিকিট কিছুদিনের মধ্যেই মিউজিয়ামে চলে যাবে।
একই পথে দ্বিতীয় বার আর তো চলা হয় না, বা হলেও সম্পূর্ণ এক নতুন রূপে নতুন ভাবে চলা হয় – সেটাই চলমান জীবনের উদ্দেশ্য। তাই, সেই টিকিট সংগ্রহ। অন্য মানুষের কাছে যে সংগ্রহের মূল্য কানাকড়িও নয়, কিন্তু, নিজের জীবন স্মৃতির কাছে সেই ছোট্ট ছোট্ট সংগ্রহের মূল্যই অপরিসীম – এক ভ্রমণ পথের স্মৃতি চিহ্ন, এক রোমাঞ্চকর সময় কাটানোর প্রমান।
চলবে