ইউরোপের সুভ্যেনির – দুই (Souvenir of Europe)

আমার কাছে তো ইউরোপের নানা শহরের ম্যাপও এক প্রিয় সুভেনির। আমরা ইউরোপের যে শহরেই গেছি, ম্যাপ নিতে হয়েছে – হোক না যুগটা জী পি এসের, গুগুল ম্যাপের কিন্তু, ইউরোপের ঐতিহাসিক শহর গুলোয় পুরনো প্রথায় ম্যাপ দেখে পথ চলার মধ্যে এক রোমাঞ্চ থাকে। ইউরোপের শহরের ম্যাপ গুলো এতো সুক্ষ ভাবে আঁকা থাকে, যে ভেনিসে কার বাড়ীর উঠোনে একটা গাছ, সেটাও ম্যাপে দেওয়া আছে – ভাবা যায়?

তাছাড়া, হোটেলের কলম থেকে শুরু করে সেলাইয়ের কিটও কখন যে আমাদের সুভেনির তালিকায় যোগ হয়ে যায়, বুঝতেই পারি না। কোথাও কোথাও আবার অযাচিত ভাবে নতুন ধরণের সুভেনির সংগ্রহ হয়ে যায়। সেবার, ইউরো কাপের সময়ে স্পেনের গ্রানাডা শহরে ছিলাম, স্পেন সেবার চ্যাম্পিয়ান ছিল, তাই ইউরো কাপ নিয়ে স্পেনের উন্মাদনা ছিল আকাশ ছোঁয়া – আর হোটেলে, ও রেস্টুরেন্টে সমস্ত টুরিস্টদের ইউরো কাপের প্রতীক সহ কাঁচের গ্লাস বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছিল – ব্যস, ঐ ইউরো কাপের গ্লাস চলে এলো আমাদের সুভেনির তালিকায়।

তারপর, নানা দেশের টাকা ও কয়েন সংগ্রহ তো সুভেনির তালিকায় আছেই। কিন্তু, ইউরোপের বেশীরভাগ দেশেই ইউরো চলার কারণে সেই সংগ্রহে একটু মন্দা পড়েছে। তবুও সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, প্রাগ – এইসব দেশের কয়েনও আমাদের কাছে ইউরোপের সুভেনির হয়ে গেছে।

লিথুয়ানিয়াতে আমাদের ক্রেডিট কার্ড দিয়েই সব কাজ চলে যাচ্ছিল – ঠিক ফিরে আসার সময় মনে হল, আরে, আমাদের সংগ্রহে তো এই দেশের কয়েন এলো না? কিন্তু, বাসেরও সময় হয়ে গেছে। বাস স্টপে বসে সময় গুনছি, ঠিক পায়ের কাছেই দেখি এক সোনালি কয়েন পড়ে আছে – লিথুনিয়ার কয়েন- দশ  litas, চট করে কুড়িয়ে নিলাম। এখন অবশ্য লিথুয়ানিয়াতেও ইউরো চালু হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের সেই সংগ্রহ লিথুয়ানিয়ার অর্থনৈতিক ইতিহাস বদলের সাক্ষী বলা যায় – আর তো কখনোই লিথুয়ানিয়ায়  litas পাওয়া যাবে না!

ফ্রান্সেও যেমন আর ফরাসী ফ্রাংক পাওয়া যায় না, অবশ্য স্থানীয় বাজারে সবজি কেনার সময় কেউ ভুল করে ফ্রাংক দিয়ে দিতে পারে, গ্রামের মানুষের কাছে হয়তো এখনো ফরাসী ফ্রাংক সংগ্রহে আছে। আমার হাতে এক সবজিওয়ালা, একবার পঞ্চাশ সেন্টের জায়গায় পঞ্চাশ ফ্রাংক দিয়েছিল, আমি সেটা দেখে বুঝেও তাকে ফিরিয়ে দিই নি – আমার সংগ্রহে রেখে দিয়েছিলাম।

পৃথিবী যখন খুব দ্রুত বদলায়, নানা দেশে মুদ্রা থেকে শুরু করে নানা ধরণের ছোট্ট ছোট্ট জিনিস গুলোও খুব তাড়াতাড়িই ইতিহাস হয়ে যায় – আর আমরা ঘটনাচক্রে একই জীবনে বহু বদলের সাক্ষী হয়ে যাই।

তবে, ইউরোপ ভ্রমণে আমরা যে কোন সুভেনিরই সংগ্রহ করি না কেন, আমার কাছে ইউরোপ যাপনের সবচেয়ে বড় সুভেনির আমাদের তোলা লক্ষ খানেক ফটো – ফটোই পারে সেই সময়কে হুবহু ধরে রাখতে, ফটোই পারে সেই মুহূর্তের সঠিক আলোকে ধরে রাখতে, ফটোই পারে দুভ্রভনিকের বিখ্যাত জলের ট্যাঙ্কের পাশে যে লোকটি নিজস্ব পোশাক পড়ে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে দুভ্রভনিকের লাল লাকি হার্ট বিক্রি করছে – তার মুখের হাসিটি ধরে রাখতে, আমার কাছে ভ্রমণের সেই ছবিই তো সবচেয়ে বড় সুভেনির । তাই, আমার কাছে ফটো সুভেনিরই দশে দশ পেয়ে যায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s