April 2009, Lyon, France
দু’হাজার বছরের পুরনো এই শহরের বুকে এখনো জড়িয়ে আছে রোমান যুগ থেকে শুরু করে রেনেসাঁস যুগের রহস্যময়তা। সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া এই শহরের অলি গলিতে, আধুনিক উচ্চ অট্টালিকার সারিতে।
ইতিহাসের সঙ্গে বাস করতে UNESCO World Heritage Site এর লিস্টে নথিভুক্ত এই ঐতিহাসিক-আধুনিক ফরাসী শহরের কোন দ্বন্দ্ব নেই।
এই শহর খাদ্য রসিক ফ্রান্স বাসির আদরের শহর – Gastronomic capital of France। হ্যাঁ, Rhône-Alpes এর কোলে ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিওর (Lyon) কথাই বলছি। দুই নদী ‘Rhône’ ও ‘ Saône’ এই শহরের দক্ষিণে এসে মিশেছে। এই দুই নদী যেন নেকলেসের মত এই শহরকে জড়িয়ে ধরে এই শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে।
এপ্রিলের এক সকালে সপ্তাহান্তের ছুটিতে, দুই সহোদরা নদী তীরে ফরাসী এই শহরের অলি গলির ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখতে পৌঁছে গেলাম।
এই শহরের বিস্তার ও ইতিহাসকে পাখির চোখ দিয়ে দেখতে প্রথমেই ফুনিকুলারে চড়ে Fourvière পাহাড়ের উপরে, ১৯ শতকের গোরার দিকে তৈরি সুক্ষ কারুকার্যে ভরা Basilique Notre Dame de Fourviere এ পৌঁছে গেলাম।
এই দিকটা শহরের পুরনো দিক। এই পাহাড়কে লিও-বাসীরা প্রার্থনার পাহাড় ‘the hill that prays’ বলে, কারণ এখানে ছোট খাটো অনেক মনাস্ট্রি, চ্যাপেল, কনভেন্ট স্কুল আছে। শহরের এই অংশও UNESCO World Heritage Site এর অন্তর্গত।
এই পাহাড়ে রোমান প্রতিপত্তি শুরু হয়েছিল ৪৩ BC তে। বেসিলিকের উপর থেকে Rhône নদীর অপারে লাল টালির ছাদের তৈরি বাড়ীর বিস্তার, লিও শহরের প্রসার দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ সেই দৃশ্যের মধ্যে যেন ডুবে গেলাম।
পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে গেছে সযত্নে সাজানো পাহাড়ি পাকদণ্ডী, সুন্দর ঘন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে রাস্তার দু’ধারে নিষ্পত্র গাছের সারি।
নেমে আসার সময় তাই আর ফুনিকুলার নয়, এই সুন্দর রাস্তা দিয়ে হেঁটেই নেমে এলাম।
এপ্রিলের দুপুরে সূর্য মধ্যগগণে। কিন্তু ‘Rhône’ ও ‘ Saône’ নদী তীরের এই শহরে এক মৃদু ঠাণ্ডা পরিবেশ, বেশ আরামপ্রদ।
এই পাহাড়ের দক্ষিণেই আছে রোমান ঐতিহাসিক ধংসাবশেষ ও এম্ফিথিয়েটার। আজও সেখানে নিয়মিত কনসার্ট হয়। কিছুদিন আগেই অনুস্কা শঙ্করের সেতারের কনসার্ট হয়েছে এই ঐতিহাসিক এম্ফিথিয়েটারে।
কবল্ট পাথরে বাঁধানো এই শহরের পাহাড়ি পুরনো অংশে হাঁটতে হাঁটতে এই শহরকে আরও বেশী চিনে নিলাম।
সময় কম, দেখার অনেক রয়ে গেল কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। ফিরতে হয়, সেটাই নিয়ম। পৃথিবীতে বোধহয় আমরা কম সময় নিয়েই এসেছি। চোখ মেলে দেখতে না দেখতেই ফেরার ডাক আসে। অনেক কিছু বাকি রয়ে যায়।