অষ্ট্রিয়ার সেই সুন্দরী, পাহাড়ি, তন্বী নদীটির জলের রং ঘন সবুজ – পান্না সবুজ, অন্তত সেদিন তাকে পান্না সবুজই দেখেছিলাম। ইউরোপিয়ান সামারের উজ্জ্বল দুপুরের সোনালি রং, আকাশের ঘন নীল, ও দূরের হলুদ সবুজ গাছের সারির মাঝে নদীটিকে দেখে প্রথমেই মনে হতে পারে – এ কি স্বপ্নে দেখা নদী? নাকি রূপকথার গল্পের কোন এক নদী!
অষ্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরের নামটিও এসেছে এই শহরের মাঝে বয়ে যাওয়া এই পান্না সবুজ নদীটির নাম থেকে – নদীটির নাম Inn River। স্থানীয়রা ভালোবেসে Inns বলে।
সুইস আল্পসের Engadin অঞ্চলের বরফ গলা জল থেকে উৎপন্ন এই নদী, সুইজারল্যান্ড সহ, অষ্ট্রিয়া ও জার্মানির মধ্যে প্রবাহিত হয়ে দানিয়ুব নদীতে মিশে যায়। অবশেষে দানিয়ুবের সঙ্গে, ইন নদীও Black Sea তে গিয়ে শেষ হয়।
ইন নদীর এই দীর্ঘ যাত্রা পথে, বহু জনবসতি, ছোট শহর, ছোট ছোট গ্রামের সঙ্গে নদীর দেখা হয়। কখনো ইন নদী যেমন যত্ন নিয়ে বয়ে যায় পোপ Benedict XVI এর জন্ম শহরের পাশ দিয়ে, তেমনি আবার হিটলারের জন্ম শহরের পাশ দিয়েও বয়ে যায়। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে জন বসতি, নদী তাদের সিঞ্চিত করে, লালন করে, যত্ন করে, বহন করে।
ইউরোপের তিনটে দেশের মধ্যে বয়ে যেতে যেতে, ইন নদীর পাশের অসংখ্য জন বসতি ও শহরের মধ্যে অন্যতম শহর এই ইন্সব্রুক – যার আক্ষরিক অর্থ – bridge over the Inn River। আর সত্যিই এই শহরে এলে ইন নদীর বুকে বেশ কয়েকটা সেতু চোখে পড়ে। ইন নদীর তীরে অষ্ট্রিয়ার এই শহরটি বেশ ঘন জনবসতি পূর্ণ।
এখানে নদীটির প্রেক্ষাপটে আল্পসের যে পাহাড় শ্রেণী দেখা যায়, সামারের উজ্জ্বল দুপুরেরও তার শিরা উপশিরায় দেখা যায় তুষার জমে থাকার চিহ্ন, আর তা দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, আল্পসের ঐ পাহাড় শ্রেণী থেকে নেমে আসা সুন্দরী নদীটির জল কেমন ঠাণ্ডা থাকতে পারে।
সাধারণত ইন্সব্রুকে শীতকালে যারা বেড়াতে আসে – তাদের উদ্দেশ্য থাকে আল্পাইন পাহাড়ের ঢালে স্কি করা, কিন্তু, গরমের সময়ে যখন আল্পসের তুষার গলে যায়, ইন নদী তখন ফুলে ফেঁপে ওঠে, নদী আরও আকর্ষণীয় হয়ে যায়।
প্রাচীন ইন্সব্রুক শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম ছিল এই নদী। এই শহরের অতীতের বাসিন্দাদের কাছে ইন নদী অনেকটা যেন বিশ্বের দরবারের দরজার মতো ছিল। তারা ব্যবসা বানিজ্যের জন্যে, এই নদী পথ ধরে, দানিয়ুব হয়ে Black Sea তে পৌঁছে যেত।
সেদিন হলুদ দুপুরে ইন নদীর তীরের সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক কি ভেবেছিলাম, আজ মনে নেই, তবে ইন নদীকে বড়ই ভালো লেগেছিল – সেই ভালো লাগার অনুভূতি যেন আজও ছুঁয়ে আছে। নদীকে ভালো লাগে। নদী যে জীবন শেখায়।
Apnar bornona awasadharon.