নদী গুয়াদাল্কিভির! কে জানে, স্প্যানিশ নদীর নামটা ঠিক ঠাক উচ্চারণ করতে পারলাম কিনা?
সেভিল শহরের যে বড় রাস্তাটি আলকাজার রাজপ্রাসাদের দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে, কোনদিকে গেলে ভালো হয়, সে কথা ভাবতে ভাবতে দ্বিধায় পড়ে গিয়ে, যখন স্প্যানিশ ছেলেটিকে রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে ঈষৎ মুচকি হেসে হাত তুলে রাস্তাটি দেখিয়ে দিয়েছিল। হতে পারে – আমরা যেমন বিদেশীদের মুখে বাংলা শুনে হাসি, ওর হাসিটা যেন সেই রকমই ছিল।
ছেলেটির দেখিয়ে দেওয়া রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সিধে পৌঁছে গিয়েছিলাম গুয়াদাল্ভিকির নদীর তীরে।
ইবেরিয়ান উপদ্বীপের পঞ্চম ও স্পেনের দ্বিতীয় দীর্ঘতম এই নদী, যার অধিকাংশ স্পেনে আন্দালুসিয়ার মধ্যে প্রবাহিত হয়। সেভিল এই নদীর তীরের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর।
নদীটির নামটি এসেছে আরবিক ভাষা থেকে – মানে, great valley । এই নদীর তীরে মানুষের বসবাস, জীবন যাপনের বিকাশের ইতিহাস বহু বহু প্রাচীন।
মধ্য যুগে স্পেনের মুরিশ সাম্রাজ্যের ব্যবসা বানিজ্যের কেন্দ্র ছিল সেভিলের এই গুয়াদাল্কিভির নদী বন্দর। তার আগে 2nd century BC তে ছিল রোমান, তারও আগে ছিল Phoenicians দের বসবাস।
তেরো শতাব্দীতে এই নদী সেভিল শহরের এক ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল – এখান থেকে স্পেনে উৎপন্ন শস্য, তেল, থেকে শুরু করে চামড়া, মধু, মোম, বাদাম, লবণাক্ত মাছ ইত্যাদি ইউরোপের নানা জায়গায় সরবরাহ করা হতো।
সেভিল শহরের এই নদী তীরে এলে সেই অতীত ইতিহাসের চিহ্ন দেখা যায় – নদীর তীরে মুরিশদের তৈরি এক স্তম্ভ – Torre del Oro বা টাওয়ার অফ গোল্ড আজও স্পেনের মুরিশ সভ্যতার গল্প বলে।
দূরে চোখ রাখলে, দেখা যায় স্পেনের এই অঞ্চলের চাষের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নদীকে কিভাবে যত্ন করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নদীর পাশে তৈরি হয়েছে পার্ক, হাঁটার রাস্তা ও সাইকেল চালানোর ট্র্যাক। স্পেনে, বসন্তে যখন বৃষ্টি হয়, তুষার গলা জল ও বৃষ্টির জল মিলে মিশে গুয়াদাল্কিভির নদীতে বন্যা আনে, নদী ফুলে ওঠে। তাই বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার আধুনিক পদ্ধতিকে অনুসরণ করার নানান চেষ্টাও দেখা যায়।
সেভিলে এই নদীকে কেন্দ্র করে নানান টুরিস্ট আকর্ষণ – যেমন, ষ্টীমার করে নদী পথে যাত্রা, কায়াক চালানো, নৌকো চালানো, হাঁটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি দেখা যায়। অনেকেই নৌকো নিয়ে নদী পথ ধরে, শহর ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে নদীর বিস্তারকে, উদারতাকে, বয়ে চলাকে দেখে নিতে ভালোবাসে।