পৃথিবীর সব দেশে এক নদী থাকে – যার উজান স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে সেই দেশের মানুষ পবিত্র হয়, সিক্ত হয়, সিঞ্চিত হয়, বাঁচে, বাড়ে। সেই দেশের মানুষের বিশ্বাসে জায়গা করে নেয় যে নদী।
ফ্রান্সের তেমনি এক নদীর নাম – Gave de Pau । পাইরেনিস পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদীটি, দক্ষিন-পশ্চিম ফ্রান্সের এক উল্লেখ যোগ্য নদী। যেহেতু, পাইরেনিস পাহাড় থেকে নেমে, ফ্রান্সের নানা গ্রাম, শহরকে ছুঁয়ে, নদীটি Pau শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, ঐ শহরের নামেই নদীটির নামকরণ হয়ে গেছে।
আর, যখন এই নদীটি ফ্রান্সের বিখ্যাত তীর্থস্থান লুর্দ শহরের, ক্যাথিড্রালটির পাশ দিয়ে বয়ে যায়, এবং সেই নদীতে গিয়ে মেশে লুর্দের পবিত্র ঝর্ণার জল, স্বভাবতই এই নদীটিকে ফ্রান্সের মানুষ খুবই পবিত্র বলে মেনে নেয়।
মানুষের জন্ম, বাঁচা, বাড়া, বিস্তার এতই সব অদ্ভুত ঘটনাবলীর সমন্বয়, যে মানুষ, জীবনের কোন এক সময় মিরাকলকে বিশ্বাস করতে শুরু করে দেয়।
কারণ, মানুষ মাঝে মাঝে তার জীবন যাপনের, জীবন ধারণের কোন প্যাটার্ন, কোন নিয়ম খুঁজে পায় না। তার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা গুলো, পরিস্থিতি গুলো কেন হল, তার কোন উত্তর যখন সে পায় না – তাকে এক অন্য শক্তির উপরে বিশ্বাস করতে হয়, তখন জন্ম হয় মিরাকল, ধর্ম, বিশ্বাস। আর মানুষের সেই বিশ্বাসকে আশ্রয় দিতেই যেন পৃথিবীর পবিত্র নদী গুলোর বয়ে চলা। তেমনি বয়ে চলা লুর্দের নদীটির।
ক্রিসমাস ইভের কনকনে ঠাণ্ডায়, ত্রস্ত বেগে বয়ে চলা নদীটির স্রোতের কলকল শব্দে এক নির্জন শান্তির ঠিকানা খুঁজে নিতে অনেকেই এই নদীটিকে দেখতে আসে।
পাইরেনিস পাহাড় থেকে বয়ে আসা, ঠাণ্ডা হাড় হিম বাতাস যেন নাক, মুখ চিড়ে দিয়ে যেতে চায়। তবুও, উচ্ছল স্রোতের বয়ে চলার ছন্দময় শব্দ যেন কোন এক অজানা শান্তির খোঁজ দিয়ে যায়। নির্জন, ঠাণ্ডা এক ভালো লাগায় ভরে ওঠে মন।
পাশে ক্যাথিড্রালের বড় ঘণ্টির ঢং ঢং – সময় জানান দেওয়ার শব্দ, ঠাণ্ডা বাতাস, ক্রিসমাস ইভের মিউজিকের আওয়াজ, শীতের ছোট্ট দিনের তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নামার তোড়জোড় – সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়, যে পরিবেশের সঙ্গে আগে কখনো আমাদের পরিচয় হয় নি।
fine