ফিরতে হয়। দৈনন্দিনতায় ফিরতেই হয়। দৈনন্দিন জীবন যাপন, সে মানুষের হোক, বা শহর, গ্রাম, দেশেরই হোক – এক অদ্ভুত স্টেবিলিটি, জীবনের স্রোত, প্রাণের আবেদন।
দৈনন্দিনতাকে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না, এড়ানো যায় না। আর সেটাই বোধহয় জীবনের এক চরম সত্য, পৃথিবীর নিয়ম – মানতেই হয়। কিছু নিয়ম আমরা নিজেরা তৈরি করি – আর কিছু নিয়ম জীবন নিজেই তৈরি করে চলে। আর দৈনন্দিনতা, জীবনের সেই নিজস্ব নিয়মের মধ্যে পড়ে।
যে কোন ঘটনা, কোন খবর, শোক, যখন হঠাৎ করে মানুষ, সমাজ, দেশ কিংবা জাতির জীবনের দৈনন্দিনতাকে আঘাত করে, সব কিছু যেন এলোমেলো করে দেয়, স্তব্ধ করে দেয় – মনে হয়, সব কিছু হারিয়ে গেল, হয়তো, কাল আর সূর্য উঠবে না, পৃথিবী হয়তো থমকে যাবে, কিন্তু, আশ্চর্য হয়ে দেখি – দিব্যি সব কিছু চলছে, আর সেই সঙ্গে আমিও চলেছি।
মানুষ সেই ঘটনা বা আঘাত থেকে ক্রমশ দূরে যেতে শুরু করে – দৈনন্দিনতার তীব্র স্রোত, সময়ের ব্যবধান হয়তো সেই আঘাতের ধার গুলোকে ভোঁতা করতে শুরু করে দেয়।
তেমনি, একটি রাস্তা – স্পেনের বার্সিলোনা শহরের বিখ্যাত ঐতিহাসিক এক রাস্তা – La Rambla, যে রাস্তা ধরে ঐ শহরের মানুষ, কিংবা যারাই ঐ শহরকে দেখতে যায়, এই রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে ভালোবাসে, যে রাস্তা ধরে কোন এক পড়ন্ত দুপুরের নরম রোদ গায়ে মেখে, আমরাও হেঁটে গিয়েছিলাম, দেখেছিলাম ঐ রাস্তার দৈনন্দিন জীবন যাপনের সহজ ছবি। যে রাস্তা, পৃথিবীর নানা দেশের মানুষের শান্ত সহাবস্থানের প্রতীক – সেই রাস্তার জন জীবনের দৈনন্দিনতাকে আঘাত করতে, স্তব্ধ করে দিতে, যখন এক দল নির্বোধ মানুষ মরীয়া হয়ে যায়, সত্যিই কি তারা সেই শহরের দৈনন্দিনতাকে স্তব্ধ করতে পারে? পারে না।
মানুষকে তো তার দৈনন্দিন নগর জীবনে ফিরতেই হয় – আর সেখানেই মানুষের দৈনন্দিনতার জয়, সভ্যতার জয়। আর ঐ নির্বোধ, অসভ্য মানুষ গুলোর হার।
দৈনন্দিন স্রোত এক ছন্দ, চলার ছন্দ, সময়ের এক স্রোত, যে স্রোতের এক একটা ঢেউ গুনে গুনে মানুষ শহর, জাতি ও দেশের জীবন চলেছে। কোন দিকে? না, কেউ জানে না। বর্তমান জীবনের অস্থিরতাকে স্থিতিশীল করাই দৈনন্দিনতার উদ্দেশ্য – ভবিষ্যতের খবর সে রাখে না। কিংবা, হয়তো দৈনন্দিনতার প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি ছন্দেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের ঠিকানা।