ভি-য়ে-না… ইতিহাস, সঙ্গীত, সুর, সংস্কৃতি, স্থাপত্যের অপূর্ব সৌন্দর্য, কাহিনী যে শহরের গায়ে গায়ে জড়ানো, সেই ভিয়েনা শহরের পথ ধরে হাঁটা যেন ঐতিহাসিকতার গহন পথে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা।
এই শহরে এলে দেখা যায়, কি ভাবে ইউরোপের রাজকীয় অতীত ও বর্তমান সময় মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। পুরো শহরটাই যেন এক খোলা মিউজিয়াম।
যেদিকেই দেখা যায়, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি স্থাপত্য যেন এক একটি গল্প বলার জন্যে মুখিয়ে থাকে। আর ভিয়েনা শহরের সেই অতীত-গল্প শোণার জন্যে, দেখার জন্যে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ এই শহরে আসে।
ভিয়েনার সেই ঐতিহাসিক পথ, রিং রোড যখন এক বিশাল স্থাপত্য – ভিয়েনার রাজপ্রাসাদের সামনে এসে থামে – দম নেয়। স্বভাবতই, বিশাল ঐ রাজ চত্বরে এসে আমাদেরও থামতে হয়। প্রাসাদ ও তার সামনের চত্বর, কোর্ট ইয়ার্ডের বিশালতায় বিস্মিত হতে হয়। যেন ঐতিহাসিক পথে, ইতিহাসের পদ চিহ্ন ধরে হাঁটতে হাঁটতে, ভিয়েনার রাজ ইতিহাসের দরবারে উঁকি দেওয়া।
অষ্ট্রিয়ার রাজ পরিবারের ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু ছিল এই বিশাল Hofburg imperial palace । দুই হাজার ছয়শো রুম, উনিশটা কোর্ট ইয়ার্ড, আঠারোটা উইংস নিয়ে, প্রায় দু’শো চল্লিশ হাজার মিটার স্কোয়ার এলাকা জুড়ে তৈরি, এই ঐতিহাসিক রাজকীয় স্থাপত্যকে, শহরের ভেতরে এক শহর, বললেও হয়তো ভুল বলা হবে না।
তেরো শতাব্দীতে Habsburg রাজবংশরা তাঁদের সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হিসাবে, ভিয়েনার সবচেয়ে মুখ্য জায়গায় নিজেদের জন্যে এই প্রাসাদ তৈরি করেছিল। তারপর প্রায় ছয়শো বছর ধরে, ধীরে ধীরে এই রাজপ্রাসাদের আকার ও আয়তন বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে, Habsburg রাজবংশের ক্ষমতার কেন্দ্র ও বাসস্থান ছিল এই রাজপ্রাসাদ।
প্রাসাদের ভেতরের মিউজিয়ামে, আজও সেই রাজ পরিবারের ব্যবহৃত জিনিস, রূপোর বাসন পত্র ইত্যাদি সাজানো আছে। প্রাসাদের ভেতরের সিসি মিউজিয়াম, ও রাজপরিবারের ঘর গুলোর বারোক, রোকোকো ইন্টিরিয়র, সব মিলেমিশে অষ্ট্রিয়ার অতীতের সেই ঐতিহ্যময় সময়কে যেন আজও ধরে রাখার চেষ্টা করে।
Habsburg রাজ পরিবারকে ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও উন্নত রাজপরিবার হিসাবে গণ্য করা হত। অতীতে, ইউরোপের অনেক অংশে, এই রাজ পরিবার রাজত্ব করে গেছে। সময় বদলে গেছে, নেই সেই রাজ পরিবার, নেই সেই রাজত্ব, সেই সাম্রাজ্য, কিন্তু, তাঁদের তৈরি এই রাজ প্রাসাদ আজও সমান ঐশ্বর্য, সমান অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে এই প্রাসাদ, অষ্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসস্থান ও অফিস।
বছরের প্রায় সারা সময়েই, এখানে প্রচুর টুরিস্টের আনাগোনা লেগেই থাকে। বহু জন সমাগমে, জন কলরবে মুখরিত এই ঐতিহাসিক রাজ প্রাঙ্গণের সময় চলেছে এক অনন্তের পথে, আর সেই অনন্ত সময়ের এক বিকেল আমরা নিজেদের জন্যে নিয়ে এসেছিলাম।