August 2013, Dubrovnik, Croatia
ডালমেসিয়ান উপকূলের এই দুভ্রভনিক শহরটি যেন টুরিস্টদের জন্যেই তৈরি হয়েছে। চারিদিকে টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস। সিটি ওয়ালে ও মিউজিয়ামে ঢোকার জন্যে, টুরিস্টদের বাসে চলাফেরার জন্য আছে Dubrovnik Card।
দুপুরের খাওয়ার জন্যে একটু বিরতি নিয়ে শুরু হল আবার দুভ্রভনিক দেখা। সকাল থেকে প্রাচীরের উপর থেকে দেখেছি এই শহরকে। এবার নীচে এই শহরের প্রধান রাস্তা Stradun ধরে ধীর গতিতে হাঁটা শুরু হল। পুরনো দিনে এই রাস্তার প্রধান দরজা রাতে বন্ধ করে দেওয়া হত। আগেই বলেছি এই রাস্তার শুরুতেই আছে Onofrio’s Fountain, সকালে একদম ভিড় ছিল না। দুপুরে দেখি ভিড় উপছে পড়েছে। এই ফোয়ারা অনেক দিন ধরে এই শহরের তেষ্টা মেটাচ্ছে, এখনো টুরিস্টরা দুপুর রোদে ঘেমে, প্রাচীর থেকে নেমে, এই ফোয়ারার জলে তেষ্টা মেটায়।
এখানে ইতিহাস ও বর্তমান মুখোমুখি, পাশাপাশি বাস করে। পুরনো দিনের সুন্দর পোশাক পড়ে স্থানীয় একজন ছোট্ট লাকি লকেট বিক্রি করছে, তাঁকে ঘিরে ক্রেতার ভিড়।
অনেকে ফোয়ারার ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে, দলে দলে নানা ভাষাভাষীর টুরিস্ট ঘুরছে, খাচ্ছে, থেমে দেখে নিচ্ছে, ফটো তুলছে – এই তো দুভ্রভনিকের নিত্য দিনের ছবি।
দুভ্রভনিকের সমস্ত গুরুত্ব পূর্ণ স্থাপত্য এই রাস্তার দু’ধারেই অবস্থিত। এই রাস্তার শেষে আছে ঘড়ি সহ City Bell Tower, আছে গথিক ও বারক স্থাপত্যের নিদর্শন the rector’s Palace।
Church of st Blaise ও cathedral দাঁড়িয়ে আছে বহু যুগ ধরে। রাস্তার দু’পাশে সামঞ্জ্যস্য পূর্ণ বাড়ী, ছোট বড় দোকান ও বিকিকিনি জায়গাটাকে যেন জাগিয়ে রেখেছে।
তবে এই জমজমাট বড় রাস্তার পাশেই নির্জন সরু গলি উঠে গেছে পাহাড়ের উপরে স্থানীয় মানুষের বাড়ীর দিকে। আন্তর্জাতিক টুরিস্টদের ভিড়ে হারিয়ে দুভ্রভনিকের প্রতিদিনের ছন্দে যেন তাল মেলাই।
সমুদ্র শহরে এলে বীচ না দেখলে যে অর্ধেক দেখাই বাকি। তাছাড়া, শুনেছি দুভ্রভনিকের সমুদ্র তটে – নুড়ি পাথর, বিশাল পাথর, বালি সবই আছে। এখানের বৈচিত্রময় সমুদ্রতটে যেতে হলে, পুরনো শহর থেকে বেশ দূরে Lapad অঞ্চলে যেতে হবে বাসে।
পৌঁছে গেলাম Lapad এ। দু’ধারে সারি সারি রেস্টুরেন্ট, হোটেল। অসম্ভব পরিষ্কার এখানের সমস্ত রাস্তাঘাট। কিছুদূর হেঁটেই চোখে পড়ল সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটার বাঁধানো রাস্তা।
পাথুরে তীরে ঘন নীল স্বচ্ছ লুটিয়ে পড়ছে, জলে অনেকেই সাঁতার কাটছে, তীরে বসে রোদের উত্তাপ নিচ্ছে। সমুদ্রের পাশে সরু এই walking trail যেন সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। যতদূর চোখ যায় নীল উদার সমুদ্রের উদার হাতছানি। এই রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে ভালো লাগে, যেন আমাদের হাঁটা গিয়ে শেষ হবে দিগন্তে। কিন্তু না, ফিরে আসি। ফিরতেই হয়।