August 2013, Dubrovnik, Croatia
এখানে পাহাড় সমুদ্রের প্রেমিক। এখানে পাহাড় ঝুঁকে সমুদ্রকে কানে কানে সারাদিন কি যেন বলে, প্রতি উত্তরে সমুদ্র ছলকে ছলকে হেসে ওঠে, গড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের পাথুরে বুকে। ওদের প্রেম আলাপন চলেছে অনন্তকাল ধরে। সেই যুগলবন্দির সামনে আমরা বরাহুত পৌছে যাই বেশ সকালেই।
সমুদ্রের ধার ঘেঁষা দুব্রভনিক পুরনো শহরটিকে মধ্যযুগীয় মোটা প্রাচীর আগলে রেখেছে। বর্তমান পৃথিবীতে বোধহয় একমাত্র দুভ্রভনিকেই সমুদ্রের পাশে মধ্যযুগের প্রাচীর ঘিরে মানুষের জীবন এখনো সচল। এখনো প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যযুগের এই প্রাচীরে প্রচুর মানুষ হাঁটে। এখন এই সিটি ওয়াল UNESCO World Heritage Site।
সকালে পৌঁছলে ভিড় ও রোদের উত্তাপ কম থাকে, তাই সিটি ওয়ালে সকালে হাঁটা শুরু করাই ভালো। এই সিটি ওয়ালে ঢোকার চারটে এনট্রান্স আছে- Pile Gate, Ploče Gate, Peskarija Gate ও Ponta Gate। দুর্গ শহরে ঢোকার মুখেই দুভ্রভনিকের প্রধান রাস্তা Stradun শুরু হয়েছে, সামনেই আছে এক জলের ফোয়ারা Onofrio’s Fountain। Pile Gate টি Stradun শুরুর মুখেই বাঁ দিকে। টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে সিটি ওয়ালে উঠে শুরু হল ওয়ালের উপরে হাঁটা। কখনো ওয়ালের উপরে হাঁটার রাস্তা বেশ সরু আবার কখনো বেশ প্রশস্ত।
প্রাচীর ঘেঁসেই পুরনো দুব্রভনিক শহরের লাল টালির বাড়ী গুলো নীল সমুদ্রের পটে এক অপরূপ ছবি তৈরি করেছে, মনে হয় যেন লাল টালির বাড়ীগুলো সমুদ্রের বুকেই তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক যুদ্ধে বোমাবর্ষণে এখানের অনেক বাড়ীর ছাদ উড়ে যায়, যুদ্ধের পরে যখন মেরামত হয় সরকারের তরফ থেকে বলা হয় বাড়ীর ছাদ অবশ্যই যেন লাল টালির হয়। প্রাচীরের উপর থেকে নিচের বাড়ীগুলো যেন এক সামঞ্জ্যস্য পূর্ণ দৃশ্যের সৃষ্টি করে, সেই দিকে এদের সরকার কড়া নজর রেখেছে। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ও সৌন্দর্যে আশীর্বাদ ধন্য এই দেশটি প্রকৃতিকে আরও সুন্দর রাখার জন্যে সদা তৎপর।
চলতে চলতে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যেন সমুদ্রের উপর থেকেই প্রাচীর তৈরি হয়েছে। নীল আকাশ, নীল সমুদ্র আর মধ্য যুগের এই প্রাচীর যেন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য তৈরি করেছে। সমুদ্রের দিকে যেখানে প্রাচীর সমুদ্রের গা ঘেঁষে উঠেছে, গাং শালিকের চিৎকার, উদার নীল সমুদ্রে সেখানে সিটি ওয়ালের উপর যেন এক উদাসীন উদারতা ছেয়ে আছে। দূরে দেখা যাচ্ছে সবুজ দ্বীপ Lokrum, নীচে মাঝসমুদ্রে কায়াক নিয়ে সেই সবুজ দ্বীপের উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি দিয়েছে অনেকে ।
হাঁটতে হাঁটতে প্রাচীরের উপর থেকে নীচে দেখা যায় স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি। প্রাচীরের পথে পড়ে Maritime Museum। মিউজিয়াম দেখে আবার শুরু হয় হাঁটা। রোদের উত্তাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। উপর থেকে দেখা যায় দুভ্রভনিকের বন্দরের প্রচুর নৌকো দাঁড়িয়ে।
এবার প্রাচীর থেকে নেমে আসার পালা। এবার বাকি আছে দুভ্রভনিক শহরকে জানা ও চেনা, এই শহরকে আরও অনেক ভালো ভাবে দেখা বাকি।