প্যারিস থেকে শুরু করে প্রাগ – ইউরোপের পথে প্রায়ই নানান কার্টুন শিল্পীদের সঙ্গে দেখা হয়েই যায়, শিল্প যে ইউরোপের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। ইউরোপে চলার পথের পাশে দেখা যায় নামী কিংবা সাধারণ মানুষের মুখের স্কেচ সাজিয়ে বসা কার্টুন শিল্পীদের, কেউ বা ব্যস্ত সামনে বসে থাকা টুরিস্টটির মুখশ্রীকে ক্যানভাসে এঁকে নিতে, আবার কেউ শুধুই তার পুরনো আঁকার প্রদর্শনী সাজিয়ে নিয়ে বসে থাকে।
প্যারিসের Montmartre এলাকা এই কার্টুন শিল্পীদের জন্যে বিখ্যাত, কার্টুন শিল্পীদের স্কোয়ারে, সকাল হলেই কার্টুন শিল্পীরা নিজেদের পসার সাজায়, রং, তুলি, ইজেল, ক্যানভাস, চারকোল নিয়ে বসে – সে এক অন্য ধরণের জীবন যাপন, শোণা যায় ইউরোপের বহু বিখ্যাত কার্টুন শিল্পী এই অঞ্চল থেকেই তৈরি হয়েছে। প্যারিসের এই অঞ্চলে, অনেক সময় রাস্তায় বসে ছবি আঁকা শিল্প শিক্ষারই অন্তর্গত।
তবে, প্যারিসের এই বিখ্যাত এলাকায় সবাই যে মুখশ্রীর ভালো স্কেচ করে তা কিন্তু নয়, কোন নব্য শিল্পীর পেনসিলে, নিজের মুখশ্রী আঁকিয়ে নিজেকেই নিজে চিনতে খুবই অসুবিধা হয়েছে, এমন কথা তো আকছার শুনেছি – আর একবার সেই অদ্ভুত অচেনা ছবি আঁকিয়ে কিন্তু নিস্তার নেই, শিল্পী যাই দাম হাঁকুক, দরদাম করে হলেও ঐ ছবি কিনতে হবে।
তাই, অনেক সময় ইউরোপে চলার পথে ‘একটু নিজেকে আঁকিয়ে যান’ ধরণের অনুরোধ হতে সাবধান হওয়াই ভালো, কারণ, ভালো শিল্পী কখনোই অনুরোধ করে না, তার কাজই প্রমান করে তার শিল্পের মহিমা, হাতের যাদু।
তবে, ইউরোপে এই সব জায়গার ঐতিহাসিক রাস্তা, গলি গুলোর বাতাসে কেমন যেন এক ধরণের নস্টালজিয়ার রেনু ভাসে, হলুদ অদ্ভুত এক আলো, পুরনো গলি, ইতিহাস, ছুটির মেজাজ, সঙ্গীত, সুর, পাশের ক্যাফে থেকে ভেসে আসা কড়া কফির মাতাল করা সুবাস – সব মিলিয়ে মনে হতেই পারে, এমনি পরিবেশে একটু বসে একটা ছবি আঁকিয়ে নিলে মন্দ হয় না। তাই, হয়তো অনেক টুরিস্টই ছবি আঁকায়। কেউ কেউ তো আবার পেন্সিলের তিন চার আঁচড়েই মুখের ছবি ফুটিয়ে তোলে।
যেমন, প্রাগের চার্লস ব্রিজের উপরে এক কার্টুনিস্ট বসে, সকাল থেকেই শুরু করে দেয় ছবি আঁকা – ওর পেন্সিল যেন থামেই না, টুরিস্টরা ওর কাছে ছবি আঁকানোর জন্যে রীতিমত লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ছবির মতো চার্লস ব্রিজের উপরে বসে, মডেল সেজে ছবি আঁকানোর মধ্যে হয়তো এক আদিম রোমাঞ্চ থাকে।
কোন কোন শিল্পী তো আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে মানুষের মুখের থ্রি ডি portrait , লিসবনের এক শান্ত স্কোয়ারে বসে সেই শিল্পীর থ্রি ডি portrait আঁকা দেখতে দেখতে আমাদের লিসবন বিকেল ধীর লয়ে সন্ধ্যায় গড়িয়েছিল – অদ্ভুত ছিল সেই বিকেলের রং, নীল সন্ধ্যার রূপ, সেই টুকরো সময়ে দেখা সেই শিল্পীর হাসিতে, শিল্পে, ধ্যানে, কাজে যেন জড়ানো ছিল এক টুকরো নস্টালজিয়ার চাদর।