ভিলনুসে যখন পৌঁছলাম ভোর রাতের অন্ধকার তখনো ফিকে হয় নি – তাই, কিছুক্ষণ বাস স্টপে বসে ভোরের আলোর অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতে হল। একটু আলো ফুটতেই পুরনো ভিলিনুস শহরের দিকে রওনা দিলাম, পুরনো ভিলিনুস শহরে ঢোকার প্রধান দরজা তখন সবে একটি দিনকে স্বাগত জানাতে তৈরি হচ্ছে।
ভোরের এই সদর দরজা আসলে পুরনো ভিলিনুস শহরে ঢোকার প্রধান গেট। গেটের ঠিক উপরেই এক চার্চ – চার্চটি লিথুনিয়ার এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান ও টুরিস্ট আকর্ষণ।
এই ভোরেই, ভোরের গেটের সামনে অনেকে চার্চে প্রার্থনার জন্যে সমবেত হয়েছে, অবশ্য তাঁদের মধ্যে অনেকে টুরিস্টও আছে। গেটের বাইরে, সামনেই স্যুভেনিরের দোকানিরা চার্চে আগত মানুষদের জন্যে ছোট ছোট ফুলের তোড়া, মাদার মেরীর ফটো ইত্যাদি নিয়ে বসার তোড়জোড় শুরু করেছে – একটি সকালের শুরু হচ্ছে।
চার্চের ঘণ্টা ধ্বনি, শান্ত পরিবেশ, নিঃশব্দে সমবেত জনতার মুখের প্রশান্তি, স্মিত হাসি – সব মিলিয়ে বেশ এক স্নিগ্ধ শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এক উজ্জ্বল সকালকে স্বাগত জানানোর এক যথার্থ পরিবেশ।
কথিত আছে, এই চার্চ এই শহরে আগত ভ্রমনার্থিদের ও শহরের মানুষদের রক্ষা করে। ষোল শতাব্দীতে প্রাচীন ভিলিনুস শহরকে সুরক্ষিত করার জন্যে সিটি ওয়াল তৈরি হয়েছিল ও এই ধরণের নয়টি গেট তৈরি হয়েছিল, আঠারো শতাব্দীতে সমস্ত গেট ও দেওয়াল ভেঙ্গে দেওয়া হয় – শুধু এই ভোরের দরজাটি অবশিষ্ট রয়ে যায় – তাই ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এই দরজার এক গুরুত্ব আছে।
ভোরের গেটের চার্চে সতেরো শতাব্দীতে রেনেসাঁস স্টাইলে আঁকা মাদার মেরীর এক ছবি পৃথিবী বিখ্যাত, ভিলিনুসের মানুষ ছবিটিকে “Vilnius Madonna” বলেই সম্বোধন করে – এখানে সবাই বিশ্বাস করে ছবিটির এক অলৌকিক শক্তি আছে। আমার মনে হয়, পৃথিবীতে মানুষের বিশ্বাসেরই এক অলৌকিক ক্ষমতা আছে।
যাইহোক, ভিলনুস শহরের ভোরের দরজা বা ‘The Gate of Dawn’ নামটি শুনেই কেমন এক স্নিগ্ধ অনুভূতি হয়, মনে হয়, যেন ভিলিনুস শহরে এই দরজা দিয়েই রাতের অন্ধকার ছিঁড়ে ভোর আসে, সূর্যদোয় হয় – এখানেই যেন প্রতিটি দিনকে স্বাগত জানানো হয়। আর সেই মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোরের দরজার সামনে আমাদের উপস্থিতির সময়ও যে মিলে যাবে ভাবি নি। সেইদিন ভোরের ঠিক আগে ভোরের দরজায় ভোরকে স্বাগত জানিয়ে ভিলনুসে আমাদের দিন শুরু হয়েছিল।