মাঝে মাঝে মনে হয় এই জীবনে পৃথিবীর নানা কোণের কতো ছোট ছোট ঘটনার, ঐতিহাসিক জায়গার নানা দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে গেলাম। কাজের ফাঁকে কোন এক হলুদ ক্লান্ত দুপুরে কোন এক জায়গার এক ঝলক ভেসে ওঠে – মুহূর্তেই চঞ্চল মন হয়ে ওঠে বাউন্ডুলে, দৈনন্দিন জীবন যাপনের কর্ম পাশ থেকে বন্ধন মুক্ত হতে চায় হৃদয় – খোঁজ করে এক মুঠো ছুটির অবকাশ।
পৃথিবীর নানা দেশের নানান ছোট বড় জায়গার দৈনন্দিন নানা দৃশ্যের কথা কতোই না জেনেছি – কখনো জেনেছি প্যারিসের মেট্রো ষ্টেশনের সময় সূচি, কখনো জেনেছি সুইস পাহাড়ে কখন তুষারপাত হয়, ঝেঁপে বৃষ্টি আসে, কখনো বা জেনেছি ক্রোয়েশিয়ার সবুজ জঙ্গলের বিশাল লেকে ফেরী আসা যাওয়ার সময়াবলী।
আর যখন দৈনন্দিন জীবন যাপনের ফাঁকে হঠাৎ-ই মনে ভেসে ওঠে এক হলুদ দুপুরে ক্রোয়েশিয়ার ঘন সবুজ জঙ্গলের মাঝে স্বচ্ছ ফিরোজা লেকের জলে খুব ধীরে নিঃশব্দে ভেসে আসছে এক ফেরী – আমরা সেই ফেরীর জন্যে অপেক্ষা করছি, স্বচ্ছ জ্বলে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এক ঝাঁক মাছের চলাফেরা, চারিদিকে পাহাড় ও জঙ্গল, নিঃশব্দ নির্জনতা – মনে হয় সত্যি কি সেদিন আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম?
ক্রোয়েশিয়ার Plitvice লেকে এলে কোন এক স্বপ্ন জগতের কথা বলেই মনে হয়। চারিদিকে অবিরাম ঝরে পড়া ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক ভাবে ধাপে ধাপে তৈরি হওয়া ফিরোজা লেক, ঘন জঙ্গলের মধ্যে সরু পথ ধরে হেঁটে চলা, পথ চলতে চলতে কখনো বা চঞ্চল উত্তাল ঝর্ণার জলের ছিটে গায়ে এসে লাগা – সেইদিন আমাদের কাছে এই সবই ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
ঘন সবুজ জঙ্গলের অফুরন্ত অক্সিজেনের সম্ভার এখানের পথ চলায় যেন কিছুতেই কান্তি আনে না, সেখানে সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনই পাহাড় জঙ্গলের পথে হেঁটেও কোন কান্তি অনুভব করি নি – এতোই তীব্র সহজ সরল আবেদন ছিল সেই জঙ্গল-লেকের, ফিরে আসার সময় মনে হয়েছিল আবার সুযোগ পেলে এখানে আসবোই।
আজও জীবন পথের কোন এক হলুদ দুপুরে ক্রোয়েশিয়ার সেই অপূর্ব ফিরোজা লেক, সবুজ জঙ্গলের ফিরোজা-সবুজ স্মৃতি তাড়া করে ফেরে, ভালো লাগে, মনকে বহমান বর্তমান থেকে ক্ষণিক ছুটি দিয়ে সবুজ জঙ্গলের স্মৃতির গহন পথে নিয়ে যাই – নিজেদেরকে ক্রোয়েশিয়ার সেই ফিরোজা লেকের ধারে ফেরীর জন্যে অপেক্ষারত দেখি।