জাগ্রেব আপার টাউনের আকাশ রেখায় উনিশ শতাব্দীর নিও গথিক ক্যাথিড্রালের আকাশ চুম্বী জোড়া চূড়া রাজত্ব করে – এই ক্যাথিড্রাল ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং, জাগ্রেবের এক ল্যান্ডমার্ক এই ক্যাথিড্রাল। দূর থেকে, শহরের বহু জায়গা থেকেই দেখা যায় ঐ দুই চূড়া, তাই রবিবারের সকালে সেই দিকেই ঢালু পাহাড়ি রাস্তা ধরে হেঁটে চলে অনেকে, এই ক্যাথিড্রাল ও তার চত্বর ঘিরে জাগ্রেবের জীবন যাত্রার এক ঝলক দেখা যায়।
জাগ্রেবের অধিকাংশ মানুষই রবিবারের সকালে চার্চে আসে – চার্চে প্রার্থনা সেরে কাছের হাট থেকে সপ্তাহের জিনিস পত্র, সবজি কিনে, কফির কাপে চুমুক দিয়ে জাগ্রেববাসীর রবিবারের ছুটির সকাল গড়ায় দুপুরে।
যদিও এই নিও গথিক ক্যাথিড্রাল সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয়েছিল উনিশ শতাব্দীতে, কিন্তু এই ক্যাথিড্রাল তৈরির সূচনা বহু কাল আগের। পনেরো শতাব্দীতে অটোম্যান বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া আক্রমণের হুমকি দিলে এই ক্যাথিড্রালকে সুরক্ষার জন্যে চারিদিক ঘিরে খুব তাড়াতাড়ি এক দুর্গ-দেওয়াল খাড়া করে দেওয়া হয়েছিল, গোল টাওয়ার গুলো থেকে অটোম্যানের সৈন্যদের উপরে নজর রাখা হোতো।
অটোম্যানের আক্রমণের আশঙ্কা শেষ হয়ে গেলে সতেরো শতাব্দীতে এক বেল টাওয়ার তৈরি হয়েছিল। উনিশ শতাব্দীতে সেই সুরক্ষা দুর্গ ভেঙ্গে দিয়ে ক্যাথিড্রালের সামনের দিক সম্পূর্ণ খুলে দেওয়া হয়েছিল – বর্তমানেও সেই দুর্গ দেওয়ালের কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়ে গেছে, ইউরোপের রেনেসাঁস সুরক্ষার এক নিদর্শন হয়ে রয়ে গেছে সেই দুর্গ দেওয়াল। তাছাড়া, ইউরোপের কোন চার্চকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে এই ধরণের দুর্গ-দেওয়াল তৈরির নিদর্শন দেখা যায় না – সেই ক্ষেত্রে গোলাকার ওয়াচ টাওয়ার যুক্ত এই রেনেসাঁ যুগের সুরক্ষা দেওয়াল ঐতিহাসিকদের কাছে এক ঐতিহাসিক গুরুত্বও পায়।
উনিশ শতাব্দীর শেষ দিকে এক ভয়ানক ভূমিকম্পে এই ক্যাথিড্রালের মারাত্মক ক্ষতি হয়, এবং নিও গথিক স্টাইলেই একে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ক্যাথিড্রালের ঠিক সামনেই সোনালি Mary column ও তাকে ঘিরে দেবদূতের সোনালি মূর্তি ক্যাথিড্রাল চত্বরকে অলংকৃত করেছে।
রবিবারের ধীর সকালে সাদা পোশাকে জাগ্রেব ক্যাথিড্রালের সামনের চত্বরে এক দল স্থানীয় নর নারীর জটলা অনেক টুরিস্টদেরই নজর কেড়ে নেয় – হাতে ফলের ঝুড়ি, মুখে হাসি নিয়ে বিদেশী টুরিস্টদের ওরা সাদরে সম্ভাষণ জানায় । হয়তো, এই ধরণের আপ্যায়ন ক্রোয়েশিয়ার সংস্কৃতির এক অঙ্গ।
পৃথিবীর পথে আমাদের পথ চলা বড়ই একমুখী এক যাত্রা, এক গলিতে দ্বিতীয় বার আর চলা যায় না, একই পথে দ্বিতীয় বার আর হাঁটা যায় না। একবার – এই একবারই পৃথিবীতে আসা, আর জাগ্রেবেও আমাদের একবারই আসা, হয়তো জীবনে আর কখনোই পৃথিবীর এই প্রান্তের এই দেশে পা রাখবো না, আর যদিও বা আসি, ঠিক এই রকম ভাবে হয়তো বা পথ চলব না, সর্বোপরি এই সময়কে তো আর কখনোই ফিরে পাবো না – তাই জাগ্রেবে এসে এই শহরের সব স্থাপত্য, ল্যান্ডমার্ক, স্থানীয় মানুষের জীবন যাপণের ঝলক সবই দু’ চোখ ভরে দেখে নিতে চাই।