ভিলিনুসের পথে (St. Anne’s Church, Vilnius, Lithuania)

ভিলিনুসের পথে জুলাইয়ের সেই সকালটি যেন ছিল সোনায় মোড়ানো, ঝকঝকে উজ্জ্বল সোনালি রোদ চারিদিক ভাসিয়ে দিয়েছে, রোদের রংটি ঠিক যেন সোনা গলানো রং – উত্তর ইউরোপের এই ভেজা ভেজা দেশে সূর্যালোক এক আশীর্বাদের মতো, এখানে বেড়াতে এসে সূর্যের আলো দেখেই মন ভালো হয়ে যায়, চারিদিক যেন আরও রঙিন হয়ে যায় – ঝকঝকে হয়ে ওঠে। আর সূর্যালোকও এখানে যেমন উজ্জ্বল তেমনি মৃদু, পথ চলা এখানে তাই বড়ই আনন্দময়।

তাছাড়া, ছুটির সকালের ভিলিনুস তখনো আড়মোড়া ভাঙছে, রাস্তা প্রায় জনমানব শূন্য। সেন্ট অ্যান’স চার্চের সামনেও লোক জন চোখে পড়ছে না। ভিলনিয়া নদীর তীরে, পুরনো ভিলিনুসের এই চার্চটি  Flamboyant ও Brick গথিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন, তাই এই চার্চ ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় স্থান পেয়েছে। পুরনো ভিলিনুসের এই চার্চ তাই ভিলিনুসে বেড়াতে আসা প্রচুর টুরিস্টদের নিজ মহিমায় আকর্ষণ করে নেয়।

এখানে এলে ইটের তৈরি এই চার্চের আকাশ চুম্বী চূড়া, বেল টাওয়ারের চূড়া, অপূর্ব Façade নজর কেড়ে নেবেই – অপূর্ব লাল খয়েরি রং ও ডিজাইনের মেলবন্ধনে এই চার্চ সত্যি খুবই সুন্দর।

এমনকি, ফ্রান্স ও রাশিয়ার যুদ্ধের সময় নেপোলিয়ান এই চার্চের কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিস্ময় প্রকাশ করে হাতের তালুতে করে এই সম্পূর্ণ চার্চটিকে প্যারিসে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

বারোক স্টাইলে সাজানো নিশব্দ আঁধার ঘেরা চার্চের ভেতর, কেমন এক গম্ভীর ভেজা ভাব, রবিবারের সার্ভিসের জন্যে পাদ্রি তৈরি হয়ে নিচ্ছে – এখানের পরিবেশে ধার্মিক গাম্ভীর্য জড়ানো।

পনেরো শতাব্দীতে লিথুনিয়ার গ্রান্ড ডিউক  Alexander এর আমলে লাল ইটের এই চার্চ তৈরি হয়েছিল, তারপর যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাচীন চার্চের বহুবার সংস্কার হয়েছে, কিন্তু চার্চের বহিরাংশ ও তার ডিজাইন সেই পনেরো শতাব্দীর আদলেই রয়ে গেছে, সেই ভাবেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর সেই প্রাচীন সৌন্দর্যের টানেই এখানে টুরিস্টরা হানা দেয়। বর্তমানে প্রাচীন এই চার্চের আশেপাশের সুন্দর ফুলের বাগান, আধুনিক স্ট্যাচু দেখে বোঝাই যায় চার্চ কতৃপক্ষ বেশ সযত্নেই রক্ষণাবেক্ষণ করে।

চারিদিক থেকে চার্চটিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে নেপোলিয়ানের মতো চার্চটিকে হাতের তালুতে করে নিয়ে আসার স্পর্ধা তো আর করতে পারি না – কিন্তু, সেই সময় নেপোলিয়ানের কাছে যা ছিল না, তা আছে আমাদের কাছে ‘ক্যামেরা’, আর আছে স্মৃতি। তাই, সুন্দরকে স্মৃতি বন্দী করে ফিরি নিজ পথে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Lithuania, Northern-Europe, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s