সুইস শহর লুজার্নে (Lucerne, Switzerland)

আল্পসের কোলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম লুজার্ন লেক, দূরে তুষার ঢাকা পাহাড় শ্রেণী, মধ্যযুগীয় কাঠের তৈরি ঢাকা দেওয়া চ্যাপেল ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার, অপূর্ব ছবির মতো ঘর বাড়ী, স্থাপত্য, বারোক চার্চ, ক্যাসেল, প্রাচীন সুইস ইতিহাস, সুইস সংস্কৃতি, নামী দামী হোটেল রিসোর্ট, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, প্রচুর টুরিস্ট, সুন্দর সাজানো দোকান, গলন্ত চকোলেট – সব মিলে মিশে এই শহরের বুকে যেন এক মোহময় নাটকীয় সুইস পটভূমি তৈরি হয়। এই শহরের পরিবেশে যেন প্রাচীন ও আধুনিক সুইস সংস্কৃতি, জীবন যাপন, সুইস পারদর্শিতা, আতিথেয়তা খুবই সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলে।

এই শহর সুইজ্যারল্যান্ডের German-speaking এলাকায় পড়ে, এখানে বেশীর ভাগ মানুষ জার্মান ভাষায় কথা বলে, আর জার্মানিরই বেশী প্রভাব। তাই, হিটলার ও মুসোলিনি যখন বেলজিয়াম, ও ফ্রান্স আক্রমণ করে কিছুটা নিজের দখলে করে নিয়েছিল, সুইজারল্যান্ড খুবই ভয়ে ভয়ে ছিল। ওরা ভেবে নিয়েছিল এবার হিটলারের পরের লক্ষ্য সুইজারল্যান্ড হতে পারে।

তাই, সুইসরা নিজেদের সুরক্ষা ও পাহারা ব্যবস্থাকে প্রচণ্ড জোরদার করেছিল। সেই পাহারা ও সুরক্ষাতে প্রচণ্ড ভাবে সাহায্য করেছিল সামনের সাদা আল্পসের নিরীহ পাহাড় শ্রেণী। দূরের ঐ সাদা পাহাড় গুলোর মধ্যে সুড়ঙ্গ করে ব্যাংক তৈরি করে নিয়েছিল, চারিদিকে কামান লাগিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা শত্রুর উপরে নজর রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল, পাহাড়ের ভেতরে রেডিও, ট্রান্সমিটার ইত্যাদি লাগিয়ে রীতিমত সেনা বেস তৈরি করে দিয়েছিল সুইসরা।

দূর থেকে দেখে যা সাধারণ পাহাড় বলে মনে হয়, আসলে তা ছিল সুইস সেনা বাহিনীর ব্যাংক, পাহাড়ের ভেতরে প্রচুর সৈন্য থাকার ব্যবস্থা ছিল। তবে হিটলার আর এগোতে পারে নি। বর্তমানে, সুইস ট্যুরিজম সেই পরিত্যক্ত অনেক সুড়ঙ্গ ও ব্যাংক গুলোকে সংস্কার করে টুরিস্টদের জন্যে খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

যাইহোক, এই শহরের প্রধান টুরিস্ট আকর্ষণ ১৪ শতাব্দীতে তৈরি কাঠের চ্যাপেল ব্রিজ। এখান থেকেই শুরু হয় টুরিস্টদের লুজার্ন দেখার পর্ব। পাশের St. Peter চ্যাপেলের নামে এই ব্রিজ শুধুই হাঁটার জন্যে। ঢাকা ব্রিজের ভেতরে চলতে চলতে, কাঠের ছাদে, তিন কোণা ফ্রেমের গায়ে চোখে পড়ে সতেরো শতাব্দীর আঁকা ছবি। তবে, অনেক ছবি আগুন লেগে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই কাঠের ব্রিজটিও – কিন্তু, সুইস পারদর্শিতায় আবার তা ভালো করে সংস্কার করে, টুরিস্টদের পথ চলার ব্যবস্থা করে দেয় সুইস ট্যুরিজম।

এই শহর থেকে সুইজারল্যান্ডের অনেক জায়গায় যাওয়া সহজ বলে টুরিস্টদের এই শহরে অন্তত এক রাত কাটাতেই হয়। আর যখন সন্ধ্যা নামে, একে একে জ্বলে ওঠে শহরের রাস্তার আলো, আর লেকের শান্ত জলের বুকেও জ্বলে ওঠে শতাব্দী প্রাচীন এই শহরের আধুনিক আলো। লেকের জলে ফুটে ওঠে কাঠের সেতুর আলোকিত ছবি – দেখি। লেকের কালো জলে তখনও ঘুরে বেড়ায় প্রচুর সাদা রাজহাঁস। ঐ সাদা রাজহাঁস গুলো নাকি বহু আগে জার্মান রাজার কাছ থেকে সুইজারল্যান্ডে উপহার হিসাবে এসেছিল। এখন তাঁদের বংশ সারা সুইজারল্যান্ডে ছড়িয়ে গেছে।

মাঝ ফেব্রুয়ারির এক শান্ত বিকেলে এই সুইস শহর লুজার্নে, লেকের পাশে দাঁড়িয়ে, তুষার ঢাকা সাদা দূর পাহাড়ের গায়ে হিমেল হাওয়ায় সন্ধ্যা নামার সাক্ষী হই। ভালো লাগে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Switzerland, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s