আসল শার্লক হোমস (Joseph Bell – Real Sherlock Holmes )

যে কোন মানুষকে এক নজর দেখে তাঁর দেশ, জীবিকা, মানুষটি সম্প্রতি কোন পারিবারিক বা আর্থিক সমস্যায় ভুগছে কিনা সমস্ত বলে দেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা শার্লক হোমস ছাড়া আর কার থাকতে পারে? ভিক্টোরিয়ান যুগের সেই বিখ্যাত ডিটেকটিভ শার্লক হোমস আজও তাঁর অভূতপূর্ব ডিডাকশন ক্ষমতা, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, আশ্চর্য মেথড দিয়ে আজকের পাঠকদের মুগ্ধ করে রেখেছে। আর বলা বাহুল্য যে এই আশ্চর্য ক্ষমতাধারী কাল্পনিক ডিটেকটিভকে নিয়ে হলিউডে ও ব্রিটেনে প্রচুর সিনেমা, টি ভি শো, থিয়েটার তৈরি হয়েছে ।

যে ডিটেকটিভের মৃত্যু নেই, সুইজারল্যান্ডের ঝর্নায় প্রোফেসর মরীয়াটির সঙ্গে হাতাহাতি করতে গিয়ে ঝর্ণায় ভেসে গিয়েও যে ডিটেকটিভ ফিরে আসে – তেমনি এক কাল্পনিক ডিটেকটিভ চরিত্র কি কখনো বাস্তবে থাকতে পারে? কিন্তু, সাহিত্য তো জীবন থেকেই উঠে আসে! জীবনই তো সাহিত্যের প্রেরণা।

আইরিশ গরীব পরিবারের ছেলে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, Edinburgh মেডিক্যাল স্কুলের ছাত্র ছিলেন। সেখানের মেডিক্যাল সায়েন্সের এক রহস্যময় প্রোফেসর Joseph Bell ছিলেন কোনান ডয়েলের প্রেরণা। শার্লক হোমসের হৃদয়হীনতা, ক্রাইম সিন থেকে অদ্ভুত ডিডাকশন ক্ষমতা সবই যেন হুবহু উঠে এসেছে সেই প্রোফেসরের আসল চরিত্র থেকে।

ছাত্রদের কাছ থেকে নিজেকে, নিজের পারিবারিক জীবনকে খুবই আলাদা করে রাখতেন ডাঃ বেল, ছাত্ররা তাঁকে এক রহস্যময় প্রোফেসরের চরিত্রেই দেখতো। ভিক্টোরিয়ান যুগে যখন ফরেনসিক সায়েন্স আজকের মতো উন্নত ছিল না, সেই সময়েই এতোই নির্ভুল ছিল তাঁর ফরেনসিক ডিডাকশন যে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকেও তিনি সাহায্য করেছিলেন। আর তিনি পর্দার আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন, যেমন কাল্পনিক শার্লক হোমসও পর্দার আড়ালে থেকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে সাহায্য করে।

যাইহোক, মেডিক্যাল ক্লাসে কোনান ডয়েলের গ্রেড ভালো ছিল না, কিন্তু রহস্যময় প্রোফেসর ডাঃ বেল প্রচুর ছাত্রের মধ্যে ডয়েলকে তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে বেছে নিলেন। সেই একবছর সময়ে কোনান ডয়েল খুব কাছ থেকে ডাঃ বেলকে দেখেছিলেন।

পরবর্তী কালে কোনান ডয়েলের কলমে ডাঃ বেল, শার্লক হোমস হিসাবে অমরত্ব লাভ করেন, ডয়েল শার্লক হোমসের চরিত্রের মধ্যে প্রোফেসর বেলকেই হুবহু তুলে ধরেন। শার্লক হোমসের জন্মের বহুদিন পর্যন্ত কেউই জানতো না, যে বিখ্যাত এই ডিটেকটিভ এক আসল চরিত্রকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে।

সেই সময় শার্লক হোমসের এক একটি অ্যাডভেঞ্চার ব্রিটেনে আলোড়ন তৈরি করে দেয়, একে একে বিশ্বের প্রচুর ভাষায় প্রকাশ হয় শার্লক হোমসের এডভেঞ্চার কাহিনী। আর শার্লক হোমসের কাহিনী সেই সময় ব্রিটেনের ডিটেকটিভ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এক নতুন পদ্ধতির জন্ম দেয় – ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন। বলা যায়, কোনান ডয়েল ব্রিটেনে মেডিক্যাল সাইন্সকে অপরাধী ধরার কাজে লাগান।

শার্লক হোমসের সাফল্যের পরে কোনান ডয়েল, তাঁর ছাত্রজীবনের প্রোফেসর বেল যে শার্লক হোমস চরিত্রের আসল প্রেরণা ছিলেন তা জানান, বলেন – এক ভালো ডাক্তার এক ভালো ডিটেকটিভ কেন হতে পারে না? মিডিয়ার নজর তখন সেই আসল শার্লক হোমসের দিকে ঘুরে যায় – তখন অনেকে তাঁকে শার্লক নামেও ডাকে। কিন্তু, প্রোফেসর বেল পাদপ্রদীপের আলোয় না থেকে, নির্জনে মেডিক্যাল ছাত্রদের পড়ানোর কাজই পছন্দ করতেন। আজও তিনি বেঁচে আছেন শার্লক হোমসের মধ্যে, যতদিন পৃথিবীতে ডিটেকটিভ সাহিত্য বেঁচে থাকবে, তাঁর সমস্ত গুণ নিয়ে, অদ্ভুত ডিডাকশন ক্ষমতা নিয়ে, তাঁর উত্তরাধিকারী হয়ে শার্লক হোমসও বেঁচে থাকবে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Fiction, Inspirational and tagged , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s