ল্যুভরে মিউজিয়ামে এসে শুধু যে ফ্রান্সের বিপ্লব, রাজ পরিবারের করুণ ইতিহাস, রাজনীতি, শিল্পের দীর্ঘ ইতিহাসকে জানা যায় তা নয়, সমগ্র ইউরোপের শিল্পের ইতিহাসকেও খুব কাছ থেকে জানা যায়। ইউরোপিয়ান আর্টের ইতিহাসের সবচেয়ে মহান ও সম্মানীয় শিল্পী মিকেলেঞ্জেলোর উদ্দ্যেশ্যে নিবেদিত ল্যুভরে মিউজিয়ামের ‘Michelangelo gallery’।
ইতালির তুস্কানি অঞ্চলের শিল্পী মিকেলেঞ্জেলো, তার জীবন কালে ইউরোপের বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে তাঁকে প্রধানই বলা যায়। তাঁর তৈরি শিল্প, ভাস্কর্যের ধরণ, শিল্প চেতনা তাঁকে তাঁর সময়ে আরও মহান করেছিল, তার সমসাময়িক অনেক শিল্পীরা তাঁকে the divine one বলেও জানতো। রোমের Sistine Chapel এর ছাদে তার আঁকা ফ্রেস্কো তাঁকে ইউরোপের শিল্পের ইতিহাসে অমর করে দিয়েছে।
ইতালির তুস্কানি অঞ্চলের মাটি, জল, হাওয়ায় বোধহয় মহান শিল্পের কোন এক ছোঁয়া আছে, কোন এক যাদু আছে – ইউরোপকে ঐ ছোট জায়গা যত মহান ও বিখ্যাত শিল্পী উপহার দিয়েছে, মনে হয় না ইউরোপের অন্য কোন জায়গা একই সঙ্গে, দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীকে বিখ্যাত শিল্পী উপহার দিয়ে গেছে। যাইহোক, ছেলেবেলায় মিকেলেঞ্জেলোর কথা ইতিহাসের পাতাতেই পড়েছি – তার তৈরি ভাস্কর্যের সামনে যে কোনদিন দাঁড়াতে পারবো, তার তৈরি ভাস্কর্য ছুঁয়ে দেখতে পারবো – ভাবি নি।
ল্যুভরের Michelangelo gallery তে মিকেলেঞ্জেলোর তৈরি নানান ভাস্কর্যের মধ্যে দুই অসম্পূর্ণ ভাস্কর্য – Dying ও Rebellious Slave কে প্রধান আকর্ষণ বলা যায়। রেনেসাঁ সময়ে ইতালিতে প্রচলিত দাস প্রথার নিদর্শন এই দুই ভাস্কর্য। এই দুই ভাস্কর্যে দুই রকমের ভঙ্গিমা দর্শকদের আকর্ষণ করে – Dying Slave এর দেহ ভঙ্গিমা দেখে মনে হয় যেন খুব ক্লান্ত, ঘুমন্ত আর Rebellious Slave এর দুমড়ানো মোচড়ানো শরীরের ভঙ্গিমায় ফুটে উঠেছে তীব্র প্রতিবাদ, নিজেকে দাসত্ব থেকে স্বাধীন করে নেওয়ার এক ব্যর্থ প্রয়াস।
মানুষের সমস্ত ধরণের আবেগকে প্রকাশ করে শিল্প। শিল্পী পাথরের গায়ে বা রং তুলির ছোঁয়ায় তার গহন মনের হতাশা, উদাসীনতা, আর্তনাদ, রাগ, ঘৃণা, ব্যথা, নিষ্ঠুরতা, প্রতিবাদ, হাসি, আনন্দ, প্রেম, অপ্রেম, একাকীত্ব সব কিছু নিংড়ে দিয়ে সৃষ্টি করে তার অপরূপ সৃষ্টি। আর তার সেই সৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়েও হয়তো প্রথমে মানুষের মনের সেই অনুভূতি গুলোই ফিরে আসে। শিল্পকে দেখে মানুষ তার নিজেরই নানান চেনা অচেনা আবেগ গুলোকে বোঝার চেষ্টা করে – আর শিল্পের আকারে মানুষের মনের অদ্ভুত আবেগ গুলোর প্রকাশ দেখে অবশেষে মুগ্ধ হয়, বিমোহিত হয়, নিজের অজান্তেই বলে ওঠে – বাঃ অপূর্ব, আশ্চর্য।
Nice!
Thank you.
You are very welcome!