ল্যুভরে মিউজিয়ামের Denon wing এর এক অংশ গ্রীক, Etruscan ও রোমান যুগের ভাস্কর্যের জন্যে সম্পূর্ণ ভাবে নিবেদিত। ইউরোপের গ্রীস, ইতালি ও মেডিটেরিয়ান অববাহিকার বিশাল অঞ্চলের শিল্পের প্রাচীন ইতিহাস উঠে এসেছে ল্যুভরে মিউজিয়ামের এই আশ্চর্য অংশে।
ল্যুভরে মিউজিয়ামে প্রথম দিকে সতেরো ও আঠারো শতাব্দীর ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে আরও প্রাচীন ভাস্কর্য ল্যুভরেতে স্থান পেয়েছে, আবার ল্যুভরে কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় ধরে প্রচুর শিল্প সংগ্রহ কিনেওছে, এদিকে আবার ফরাসী বিপ্লবের সময় প্রচুর শিল্প ফ্রান্সের নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করে ল্যুভরেতে আনা হয়েছিল, তাছাড়া ফরাসী রাজ পরিবারের ভাস্কর্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রাচীন রোমান ভাস্কর্য সবই এই অংশে আছে – তাই এই অংশের সংগ্রহ প্রচুর।
গ্রীসের নানা জায়গায়, দ্বীপে প্রত্নতাত্বিক খনন করে প্রাচীন গ্রীসের প্রচুর ভাস্কর্য, ভাস্কর্যের টুকরো, পাওয়া গিয়েছিল, ল্যুভরে বহু সযত্নে প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসের সেই নিদর্শনের সংগ্রহ গুলোকে এই অংশে, একই জায়গায় পৃথিবীর মানুষের সামনে প্রদর্শন করেছে।
এখানে রোমান সারকোফেগাস থেকে শুরু করে সিংহাসন, স্ট্যাচু সমস্ত ভাস্কর্য শিল্পের গায়ে ফুটে উঠেছে প্রাচীন ইউরোপের শিল্প ইতিহাস, প্রাচীন শিল্প চেতনা, রুচিবোধ, সূক্ষ্মতা, পারফেকশন।
প্রাচীন সভ্যতার এই বিশাল সংগ্রহ, দীর্ঘ ইতিহাস, মানুষের উপস্থিতির চিহ্ন নিজের চোখে দেখতে প্রতিদিন হাজার মানুষ ল্যুভরে মিউজিয়ামে উপস্থিত হয়, পাথরের গায়ে অতি প্রাচীন থমকানো সময়কে দু’চোখ ভরে দেখে। হয়তো বা অনেকে পাথরে তৈরি ভাস্কর্যের গায়ে প্রানের উষ্ণতা খোঁজার নেশায়, শীতল প্রাণ হীন শ্বেত ভাস্কর্য গুলোকে ছুঁয়ে দেখতে চায়, শীতল ভাস্কর্যের গায়ে হাত দিয়ে অনুভব করতে চায় প্রাচীন শিল্পীর মহানতাকে, অধ্যবসায়কে, একাগ্র মনোযোগকে, মগ্নতাকে।
ল্যুভরে মিউজিয়ামের ভেতরটি সত্যিই যেন এক টাইম মেশিন – দরজা দিয়ে ঢুকেই সহস্রাব্দ পিছিয়ে যায় মানুষ। ল্যুভরে মিউজিয়াম যেন মানুষের সেই প্রাচীন প্রশ্ন ‘পৃথিবীতে কেন এলাম?’ প্রশ্নটির অনেকটাই উত্তর দিয়ে দেয়।
পৃথিবীর বুকে কঠিন শ্বেত পাথরের জঠরে বন্দী ছিল প্রাচীন গ্রীক, ইতালিয়ান, ও রোমান যুগের কতোই না ভাস্কর্য, তাদের আশ্চর্য ভঙ্গি – আর সেই কঠিন প্রাণ হীন, শীতল পাথরকে অতীতের সেই অতি জেদি মানুষেরা ছেনি হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে যেন প্রান দিয়েছে, দিয়েছে রূপ, আবেগ, ভঙ্গিমা, অমরত্ব। সামান্য মূল্যের পাথরকে শিল্পীরা করেছে অমূল্য, অপরূপ।
প্রাচীন কালে সেই শিল্পী মানুষেরা পৃথিবীতে এসেছিল সেই কথাটি পাথরের বুকে এঁকে গেছে শিল্পের আকারে, ভাস্কর্যের আকারে – সে কি ছিল তাঁদের নিজেকে অমর করার প্রচেষ্টা? আর পৃথিবীর বুকে তাঁদের সেই উপস্থিতির নিদর্শন আজও মানুষকে অবাক করে, আশ্চর্য করে – আর আগত শত শতাব্দী ধরে আশ্চর্য করে যাবে।
পৃথিবী মানুষকে ধরে রাখে না, কিন্তু তাঁর কাজকে, সৃষ্টিকে, শিল্পকে বড় সযত্নে সংরক্ষণ করে – ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি…।