প্যারিসের ঐতিহাসিক ল্যুভরে মিউজিয়ামের ঘরে যেখানে একদিকে হাজার বছরের ইতিহাস আজও সযত্নে সংরক্ষিত আছে, সেই মিউজিয়ামের বিশাল চত্বর থেকে পশ্চিম দিকের দীর্ঘ ঐতিহাসিক সরলরেখার (Historical Axis) শেষে, প্রায় দশ কিলোমিটারের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিক স্থাপত্য প্যারিসের এক অতি আধুনিক রূপ। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র বলা যায় এই লা দিফেন্সকে। ফ্রান্স সহ পৃথিবীর অনেক বড় বড় কর্পোরেট অফিসের ঠিকানা প্যারিসের এই লা দিফেন্স।
প্যারিসের Historical Axis এর শেষে এই লা দিফেন্সে ঢোকার মুখেই আছে ‘La Grande Arche’। ষ্টীলের বীম, তার, কাঁচ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সম্পূর্ণ আধুনিক ডিজাইনের এই তোরণ – কল্প বিজ্ঞানই বটে। উজ্জ্বল দিন থাকলে এখানে দাঁড়িয়ে প্রায় একই সরলরেখায় Arc de Triomphe এর অবস্থানকে স্পষ্ট দেখা যায়, বোঝা যায় সময়ের যাত্রা, প্যারিসের অতীত ও আধুনিক দুই সময়কেই পাশাপাশি অনুভব করা যায়।
লা দিফেন্সের এই অতি আধুনিক রূপের সঙ্গে ঐতিহাসিক রূপকথা নগরী প্যারিসের যেন কোন মিল নেই – বরং এখানে এসে মনে হয় যেন কল্পবিজ্ঞানের যুগের অতি আধুনিক এক শহরে চলে এসেছি।
আর প্যারিস যেখানে শহরের প্রতিটি কোণে অতীত দিনের ছোঁয়া সেখানে এই আধুনিক নগরী লা দিফেন্স যেন প্যারিসকে এক অন্য অতি আধুনিক মাত্রা দেয়, প্যারিসের এক আধুনিক দিকের ছোঁয়া দেয়। যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে অত্যাধুনিকতাকে বরণ করে নিয়ে মানব সভ্যতার ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার প্যারিসের এই লা দিফেন্স – তাই প্যারিসে এলে অন্তত একবার লা দিফেন্সে এসে আধুনিক প্যারিসের স্পর্শ নিয়ে যায় পৃথিবীর বহু পর্যটক।
মানুষের সভ্যতার ইতিহাস সর্বদাই নিজের কল্পনা, শক্তি, বুদ্ধি, চিন্তা, মানসিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা, ক্ষমতার সীমানাকে অতিক্রম করার ইতিহাস। পৃথিবী শুরুর সময় যেদিন থেকে পৃথিবীর বুকে মানুষ এসেছে, মানুষ এখানে শুধু আশ্চর্য কীর্তিই করে গেছে।
আর প্রতিটি যুগে নতুন নতুন মানুষ এসে পূর্ব প্রজন্মের সমস্ত চিন্তার সীমানাকে অতিক্রম করে পৃথিবীর বুকে মানব সভ্যতার বিজয়যাত্রাকে বজায় রেখেছে। আর সেই বিজয়যাত্রার এক বৃহৎ চিহ্ন প্যারিসের লা দিফেন্স (La Défense)। লা দিফেন্সের বিশাল এলাকায় ষ্টীল ও কাচের তৈরি আকাশ ছোঁয়া উঁচু স্থাপত্য, অত্যাধুনিক ডিজাইন, আধুনিক আর্কিটেকচার সবই যেন মানুষের সেই সীমানা অতিক্রমের আদিম তীব্র নেশাকেই প্রমান করে।