ঠিক দুপুরবেলায় কামান দাগার বিকট শব্দে জাগ্রেব শহরের পুরনো অংশের এক দিক প্রায় কেঁপে ওঠে, ইতি উতি ঘুরতে থাকা সমস্ত টুরিস্ট চমকে ওঠে, ইউরোপের সাধারণ শান্ত পরিবেশে এই ধরণের শব্দ এক অস্বাভাবিক ঘটনাই বটে, অবশ্য স্থানীয় মানুষ বা সুভেনিরের দোকানদারদের হাবভাবের কোন বদল হয় না – ওরা নির্বিকার ভাবে নিজেদের কাজে মগ্ন থাকে, যেন বিকট শব্দ নিত্য দিনের অতি সাধারণ এক ঘটনা।
দেখি, শুধু টুরিস্টরাই একটু ভুরু কুঁচকে কৌতূহলী হয়ে শব্দের উৎসের দিকে হাঁটে – আসলে প্রতিদিন ঠিক দুপুরে নিয়ম করে জাগ্রেবের Lotrščak Tower বা Kula Lotrščak এর একদম উপর থেকে কামান দাগা হয়। না, কোন শত্রু পক্ষের আক্রমণের সংকেত নয় এই বিকট শব্দ, এই কামান দাগার পেছনে নিতান্তই এক সহজ সরল উদ্দেশ্য কাজ করে – জাগ্রেব বাসীদের দুপুর বারোটা বেজে যাওয়ার সশব্দ জানান দেওয়া হয়।
তেরো শতাব্দীতে জাগ্রেবের পুরনো অংশ ‘Gornji grad’, এর দক্ষিণে প্রাচীন এই টাওয়ার তৈরি হয়েছিল। জাগ্রেব শহর দুর্গের দক্ষিণ গেট পাহারা দেওয়ার জন্যে তৈরি এই টাওয়ার এখন জাগ্রেবের এক ঐতিহাসিক টুরিস্ট আকর্ষণ ও ল্যান্ডমার্ক বলা যায়।
টাওয়ারের নীচ তলার ঘরে টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস, ও পাশ দিয়ে সিঁড়ি ধরে চলে যাওয়া যায় টাওয়ারের একদম উপরে। উপর থেকে নতুন জাগ্রেবের প্রসারিত দৃশ্য দেখা যায়।
এই টাওয়ারের ঐতিহাসিক এক আকর্ষণ তো আছেই, কিন্তু, মাঝ দুপুরে ঐ কামান দেগে দিয়ে টাওয়ারটি যেন নিজের উপস্থিতিকে আরও সরবে প্রমান করেছে, নিজের অস্ত্বিত্ব সশব্দে ঘোষণা করার ফলে এই টাওয়ারের প্রতি টুরিস্টদের কৌতূহল আরও বেশী গাঢ় হয়েছে। না হলে অতি সাধারণ এই প্রাচীন টাওয়ারটি হয়তো টুরিস্টদের নজর এড়িয়েই যেত – এই পথে হয়তো খুব কম মানুষই আসতো।
তাই, মাঝে মাঝে মনে হয় অতি সাধারণ হয়ে বেঁচেও মাঝে মাঝে সশব্দে নিজের অস্ত্বিত্ব জানান দেওয়ারও বুঝি বা প্রয়োজন আছে। একটু প্রতিবাদ, একটু অসাধারণ হওয়া, একটু অন্যরকম ভাবা বুঝি বা জীবনের অস্ত্বিত্বকেই প্রমান করে, বেঁচে থাকার ইন্ধন যোগায় – কে জানে?