সুইস রাজধানী শহরে (Bern, Switzerland)

শুনেছি, সুইজারল্যান্ডের এই রাজধানী শহরের ফুট পাথের নীচে ব্যঙ্কের বিশাল ভোল্ট আছে। পুরো শহরটাই নাকি পৃথিবীর সমস্ত দেশের বহুদিনের গচ্ছিত সম্পদ, টাকা, সোনা দানার উপরেই গড়ে উঠেছে। এই শহরের পথে অতি সাধারণ মানুষও নাকি টাকার ভোল্টের উপর দিয়ে হেঁটে যায়। অতি অবশ্যই এ সবই মানুষের মন গড়া কথা, শোণা কথা।

তবে, সুইজারল্যান্ডে এসে বোঝা যায় – প্রকৃতি যেমন তার সৌন্দর্য ও সম্পদ রাশি দিয়ে এই দেশকে সাজিয়েছে, তেমনি এই দেশের মানুষ তার বুদ্ধি ও পরিশ্রম দিয়ে দেশের সম্পদকে বাড়িয়েছে হাজার গুণ। আর, নিজেদের দেশকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সুরক্ষিত করে তৃতীয় ও উন্নতিশীল পৃথিবীর নানা দেশের গোপন ধন গচ্ছিত রাখার জন্যে দিয়েছে অবাধ স্বাধীনতা।

যাইহোক, লাল ট্রামের এই শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রটি এতোই ছোট যে হাঁটা পথেই দিব্যি এই শহরের প্রধান টুরিস্ট আকর্ষণ গুলো দেখে নেওয়া যায়। তবে সুইস পাসের অধিকারী হলে যে কোন সময় উঠে পড়া যায় এই লাল ট্রামে।

সম্পূর্ণ ভাবে পাথুরে স্থাপত্যে ঘেরা, মধ্যযুগের এই শহরটি ইউনেস্কোর হেরিটেজ লিস্টের অন্তর্গত। ইউরোপের অন্যান্য ঐতিহাসিক শহর, ও স্থাপত্য যুদ্ধের ফলে কিছু না কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এবং নানান ধরণের সংস্কারের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু, এই শহরের সমস্ত ইমারত মধ্যযুগের। এই শহরের বুকে ইতিহাস এখনো থমকে আছে।

ঐতিহাসিক শহরের প্রধান রাস্তার দু’পাশে ঢাকা ফুটপাথে, পৃথিবীর সমস্ত ব্র্যান্ডের আলো ঝলমল, ঝকঝকে দোকানের রোশনাই দেখতে দেখতে প্রচুর টুরিস্ট পথ হাঁটে। অবশ্য, পথের মাঝে রঙিন ফোয়ারার সৌন্দর্য, যুদ্ধের বেশে ভালুকের রঙিন মূর্তি স্তম্ভ, প্রাচীন অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ক্লক, ক্লক টাওয়ার – সবই মানুষের পথ চলা থামিয়ে দেয়, মানুষ দেখে নিতে চায় এই শহরে ইতিহাস ও বর্তমানের অপার ঐশ্বর্যের মেল বন্দন।

প্রাচীন এই বার্ন শহরটি Aare নদীর বাঁকে এক সুরক্ষা কবচের মধ্যে গড়ে উঠেছিল, কিন্তু, আধুনিক এই শহরে প্রচুর সেতু তৈরি হয়ে শহরের আয়তনকে অনেক বাড়িয়েছে। সেতুর উপর থেকে দিগন্তে দেখা যায়, সুইজ্যাল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু প্রটেস্টান্ট চার্চের চূড়া, পার্লামেন্ট হাউসের গম্বুজ, সরকারী দপ্তর।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সুইস আবহাওয়ার মেজাজ খুবই খামখেয়ালী, তাই, দুপুরের দিকেই দেখি আকাশ কালো করে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ঐতিহাসিক কেন্দ্র ছাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজ পেড়িয়ে অনেকটাই বাইরের দিকে চলে এসেছিলাম। জনশূন্য রাস্তায় বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হল। মারাত্মক ঠাণ্ডায় মনে হল বৃষ্টি তো নয় – যেন বরফ পড়ছে। মাথা গোঁজার জায়গা খুঁজতে খুঁজতেই সামনের ট্রাম স্টপে দেখি লাল ট্রাম এসে থামল।

তাড়াতাড়ি ট্রামে চেপে মাথা বাঁচিয়ে রক্ষা পেলাম। আবার এসে ঐতিহাসিক কেন্দ্রে নেমে পড়লাম – বৃষ্টি মাথায় নিয়েই। এই ঐতিহাসিক শহরের ফুটপাতটি ঢাকা দেওয়া, তাই রোদ, বৃষ্টি, তুষার সবই উপেক্ষা করে টুরিস্টের দল এই শহরের পথে হেঁটে যেতে পারে। আমরাও ঐতিহাসিক শহরের বুকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি দেখতে, অনুভব করতে মিশে গেলাম সেই অচেনা জনস্রোতে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Switzerland, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s