ভিয়েনা ক্যাথিড্রালে (St. Stephen’s Cathedral, Vienna)

ভিয়েনা – এই সেই শহর, ইতিহাসের কতো বিখ্যাত মানুষের স্বপ্নের চারণ ভূমি, যৌবনের কর্ম ভূমি। আবার ইতিহাসের সেই কুখ্যাত মানুষটিরও স্বপ্ন ও কর্ম ভূমি এই ভিয়েনা। হয়তো, আজকের আধুনিক ভিয়েনা তার গর্ভের বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে যত না গর্বিত, কুখ্যাত মানুষটিকে নিয়ে লজ্জিত তার শত গুণ।

যাইহোক, নানা রঙের টাইলসের তৈরি অপূর্ব সজ্জার ছাদের স্থাপত্যে, আকাশ চুম্বী উঁচু গথিক চূড়ায়, হাজার টুরিস্টের ভিড়ে, মোজার্টের অপেরার সাজে রঙিন জমকালো পোশাকে সজ্জিত অস্ট্রিয়ান যুবকদের পোশাকে, ঘোড়ার গাড়ির লণ্ঠনে, চালকের সাজে, ঘোড়ার খুড়ের আওয়াজে, রাস্তার এক পাশে বসা ভিখারিটির বাজানো মন কেমন করা বাজনার সুরে – ভিয়েনার শহর কেন্দ্রে  St. Stephen’s  ক্যাথিড্রালের সামনের, এই জায়গায় যেন থমকে আছে বহু বহু পুরনো দিনের এক ছবি। এই বিশাল গথিক ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে ঘিরে ভিয়েনার প্রতিদিনের জন জীবন স্পন্দিত হয়।

রঙিন পোশাকে সজ্জিত অস্ট্রিয়ান যুবকরা St. Stephen’s  ক্যাথিড্রালের সামনের বিশাল চত্বরে ঘুরে ফিরে বিক্রি করে মোজার্টের অপেরার টিকিট। টুরিস্ট দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে আসে, খুবই ভদ্র ও বিনীত ভাবে জিজ্ঞেস করে – ‘একটু মোজার্ট হয়ে যাক!’ এই শহরের হাওয়ায় ভাসে – কতো সুর, কতো গান।        

ভিয়েনার ইতিহাসের বহু উত্থান পতনের সাক্ষী হয়েছে এই ঐতিহাসিক গথিক ক্যাথিড্রাল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে এই ক্যাথিড্রালের ভেতর ও বাইরের প্রচুর অংশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কোনরকমে বেঁচে গেছে এই অপূর্ব স্থাপত্য। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ দিনে, ক্যাথিড্রালের ছাদে আগুন লেগে, এর অনেক অংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ভিয়েনার মানুষের গর্বের এই ক্যাথিড্রালকে যুদ্ধের পরেই পুনরায় তৈরি করা হয়। ফিরিয়ে দেওয়া হয় এর ছাদের রঙিন, উজ্জ্বল টাইলসের অপূর্ব নিখুঁত সৌন্দর্য, কারুকাজ, ভেতরের কাঁচের জানালার রং।

আজ এই গথিক ক্যাথিড্রাল ও সামনের বিশাল চত্বরের হাজার মানুষের জীবন স্পন্দন যেন ভিয়েনার মানুষের স্বাধীন, মুক্ত, দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশের আরেক মাধ্যম। এই স্থাপত্যের ক্যাথিড্রালের ভেতরে গায়ে গায়ে ছড়িয়ে আছে রেনেসাঁস সময়ের বহু অনামি শিল্পীর শিল্প কলা, ভাস্কর্য।

হালকা মেঘলা দিনে এখানের পরিবেশে আরও যেন ঐতিহাসিক গুরু গম্ভীরতা, রহস্যময়তা থমকে আছে। ভিয়েনার এই পরিবেশই বোধহয় ইতিহাসের বিখ্যাত মানুষদেরকে চিন্তার খোরাক দিয়েছে, যোগান দিয়ে গেছে তাঁদের বহু বাঁধন ছাড়া স্বপ্ন।

শেষ বেলায়, পাহাড়ের মতো বিশাল এই ক্যাথিড্রালের ছায়া পড়ে সামনের চত্বরে খুব তাড়াতাড়িই যেন সন্ধ্যা নামে। আশেপাশের প্রাচীন দোকান গুলোর আলো জ্বলে ওঠে। প্রচুর টুরিস্টের গুঞ্জনে এই জায়গা ভরপুর। হয়তো, আজও অনেক মানুষ স্বপ্নের খোঁজে, সুরের খোঁজে পাড়ি দেয় ভিয়েনায়। কিংবা, অনেকে হয়তো আমাদের মতো শুধুই ভিয়েনাকে দেখার জন্যেই ভিয়েনায় এসে হাজির হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Austria, Europe, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s