পাথরের কাঠিন্যর অহং দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে হেলসিঙ্কির এই আধুনিক চার্চ – Church of the Rock। পাথরের হৃদয় খুড়ে তৈরি এই Lutheran চার্চের ভেতর সম্পূর্ণ রূপে সূর্যের প্রাকৃতিক আলোয় আলোকিত হয়, চার্চের ছাদটি তামার তৈরি এক বিশাল গোলাকার গম্বুজ – আর সেই তামার গোল ছাদ ঘিরে নানা আকারের যে কাঁচ ও বিম আছে, তা দিয়ে ঢোকে দিনের আলো। চার্চের ভেতরে উজ্জ্বল দিনে রোদের তেড়ছা আলোর ছায়া পড়ে এক অপূর্ব ছবি তৈরি হয়।
যীশুর মূর্তি হীন এই চার্চ অন্যান্য চার্চের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা – তাই এই চার্চ হেলসিঙ্কির অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। প্রচুর টুরিস্ট হেলসিঙ্কি এসে এই চার্চ না দেখে ফেরে না। মূর্তি হীন, কিন্তু, ভেতরে প্রচুর পরিমাণে যীশুর বাণী লেখা লিফলেট রাখা আছে, যে কেউ চাইলে বিনামূল্যেই দেওয়া হয়।
এই চার্চের ভেতর পাথরের সমস্ত প্রাকৃতিক গুণ বজায় রেখেই তৈরি – তাই ভেতরে ঢুকে রুক্ষ পাথুরে দেওয়াল দেখে মনেই হয়, কোন এক পাথুরে গুহায় ঢুকেছি, শুধু এখানে দিনের আলো ঢুকে আলোকিত হয়।
ভেতরে এক অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ, রবিবারের সকালে হেলসিঙ্কিবাসীর ধার্মিক আনাগোনায় চার্চের পরিবেশে ইউরোপের অন্যান্য চার্চের মতোই এক ধার্মিক গাম্ভীর্য বর্তমান। অবশ্য, শুধু যে হেলসিঙ্কিবাসীরই ভিড় তা নয়, প্রচুর জাপানিস টুরিস্টও সকালেই হানা দিয়েছে।
যাইহোক, ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পাশে পাথুরে দেওয়ালের গায়ে চার্চের সাধারণ মাপের এক অর্গান পাইপ শোভা দিচ্ছে। সামনেই এক ফিনিশ মেয়ে সুরেলা আওয়াজে পিয়ানো বাজিয়ে গান গাইছে। সেই সুর যেন এই পাথুরে গুহা চার্চে প্রানের সঞ্চার করেছে। ধর্ম মানুষের যাই হোক না কেন, সুরের কোন জাত ধর্ম নেই – জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সুর সঙ্গীত সবাইকেই দেয় আনন্দ, সবাইকেই যায় ছুঁয়ে। তাই, দেখি, পথ চলতি অনেক টুরিস্ট চার্চের সারি বাঁধা বেঞ্চে দু’দণ্ড বসে মনের শান্তির খোঁজ করে, সুর স্নান সেরে নিয়ে আবার শুরু হয় পথিকের পথ চলা।