বার্সিলোনায় এসে টুরিস্টরা এই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ও কুখ্যাত রাস্তা La Rambla য় হাঁটার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় না করে কেউই ফেরে না। Plaça de Catalunya চত্বর থেকে শুরু করে প্রায় এক কিলোমিটারের এই রাস্তা ধরে হেঁটে বার্সিলোনা বন্দর Port Vell এ পৌঁছে যাওয়া যায়।
এই পথ পথিককে যেখানেই নিয়ে যাক না কেন, পথের দু’ধারে টুরিস্টদের আকর্ষণ করার জন্যে প্রচুর পসার সাজানো – বড় দোকান, স্যুভেনিরের দোকান থেকে শুরু করে, স্ট্রীট আর্ট, ভিখারি, জীবন্ত স্ট্যাচু, রাস্তার নাটক, খেলা, ফাস্ট ফুড, কিওস্ক – কি নেই।
বার্সিলোনার টুরিস্টদের কাছে এই পথ কেনই বা এতো জনপ্রিয় হয়ে গেছে, ঠিক জানা নেই, তবে বার্সিলোনার প্রচুর পকেটমার, ছিনতাইবাজদের বড় প্রিয় রাস্তা এই La Rambla। টুরিস্টদের ভিড়ে ঠাসা এই রাস্তায় হাঁটার সময় সবার অগোচরে যে কি ভাবে কাজ সাড়ে বার্সিলোনার পকেটমাররা – সে এক রীতিমত রহস্য। শুনেছি – অনেক সময়, পকেটমাররা এই রাস্তায় পাশে চলতে চলতে সামনে কিছু ফেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করে – এটা তোমার? তখন কেউ যদি সেই দিকে মন দিয়ে দেয়, ব্যস তাঁর ক্ষণিকের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে নিমেষে পকেট সাফাই করে দেয় ওরা। মোটকথা, এই রাস্তায় টুরিস্টদের বেশ সতর্ক হয়েই চলতে হয়।
দীর্ঘ এই রাস্তা কলম্বাসের স্ট্যাচুর কাছে এসে মোড় নেয়। কলম্বাসের প্রথম আমেরিকা যাত্রার স্মরণে, বার্সিলোনার এই ব্যস্ত রাস্তার শেষে, ষাট মিটার উচ্চতার এই মনুমেন্টটি দাঁড়িয়ে আছে।
হালকা চালে নানা দেশের টুরিস্টদের ভিড়ের সঙ্গে চলতে চলতে, মানুষ ও পথের পাশের নানা জিনিস দেখতে দেখতে, কোন এক দু’টো স্যুভেনিরের দর দাম করতে করতে – বেশ খোলা মেলা বন্দরের মুখে পৌঁছে যাই।
La Rambla রাস্তার দলবদ্ধ ভিড় জলের কাছে এই খোলামেলা জায়গায় এসে কেমন ছড়িয়ে যায়। জলের কিনারে কাঠ দিয়ে বাঁধানো শুধুই হাঁটার রাস্তা বা সেতু ‘Rambla de Mar’ নিয়ে যায় Port Vell এর দিকে। এখানে জলের পাশে সারি বাঁধা বেঞ্চ, কাঠের রাস্তা, পাশের দোকান, জলের উপরে সারি বাঁধা প্রচুর নৌকো, বন্দরে অপেক্ষারত জাহাজ, পেছনের নীল পাহাড় – সবই যেন ভীষণ ভাবে গোছানো, ছন্দ বদ্ধ। যেন – এখানে টুরিস্টদের নিমন্ত্রণের জন্যে সমস্ত উপকরণই সাজানো।
এখানে বিকেলের দিকে জলের পাশের বেঞ্চে বসে প্রচুর অচেনা মানুষের আনাগোনা, হাসি আনন্দ দেখতে দেখতে মনে হয় – বার্সিলোনা যেন জানে কি ভাবে এখানে আসা মানুষদের এক টুকরো সুন্দর বিকেল, ও সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণ উপহার দিতে হয়। আর এও জানে তার তীরে বসে জীবনের কোন এক সুন্দর বিকেল কাটিয়ে যাওয়া মানুষরা একদিন তার স্মৃতিচারণ করবে।