একটি কুড়ি দু’টি পাতার সেই সুবাসিত রসে বোধহয় পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষ ডুবে আছে। সেই কবে থেকে এক কাপ চা আমার জীবনের সমস্ত রাত জাগা, চিন্তা, দুঃশ্চিন্তার সঙ্গী। প্রতিদিন ঘুম ঘুম সকালে চায়ের সুবাস যেন আমার চেতনাকে জাগ্রত করে। এতোকাল আমার কাছে চা মানেই ছিল দুধ আর বেশী চিনি দিয়ে তৈরি বেশ কড়া চা।
ফ্রান্সে এসে নানা ধরণের চায়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম। অফিসে আমার সামনে বসা ফরাসী কলিগটি খুবই চা ভালো বাসে – দুপুর হলেই কেটলিতে গরম জল করে টি ব্যাগ দিয়ে চা বানায় – ওর কাছেই দেখেছি পৃথিবীর নানা জায়গার নানা সুবাসের চায়ের সংগ্রহ – চেরি, স্ট্রবেরি, পুদিনা, বেসিল, আদা, এলাচি, দারুচিনি সবই সুবাস মজুত। এক কাঠের বাক্সে সাজানো নানা ধরণের টি ব্যাগ – মরোক্ক, রাশিয়া, চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, কেনিয়া – দেখি প্রায় সব দেশেরই চা ওর সংগ্রহে।
সেই আমার পরিচয় সবুজ চা বা গ্রিন টি এর সঙ্গে। তাছাড়া, এক চীনা বন্ধু যখনই বাড়ী যায়, চীন থেকে এনে দেয় আসল চাইনিজ গ্রিন টি। বরাবর কড়া দুধ চায়ে অভ্যস্ত আমার কাছে প্রথমে প্রথমে গ্রীন টি পাতা সেদ্ধ জল ছাড়া আর কিছুই মনে হতো না। কিন্তু, ঐ যে, যেভাবে ইংরেজরা ভারতীয়দেরকে চায়ের প্রতি আসক্ত করে দিয়েছিল, তেমনি ফরাসী ও চীনা বন্ধু মিলে আমাকে সবুজ চায়ের মোহে ফেলে দেয়। তারপর তো শুনি, প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর সবুজ চায়ের নাকি মহৎ গুণাবলী আছে।
একবার সবুজ চায়ের গুণাবলী গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ – সবুজ চাএর সবচেয়ে বড় গুণ নাকি নানা ধরণের ক্যানসার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। তাছাড়া, ওজন কমাতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের চিন্তা ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরে ফ্রি রেডিকেল উৎপন্ন কমিয়ে চামড়ার বয়স কমায়, মন সতেজ করে, শরীরের দরকারি মিনারেলের যোগান দেয়, কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে, রক্তের ট্রাই গ্লিসারাইড কমায়, বয়স কালীন আলঝাইমার ও পারকিন্সন রোগ কমাতে সাহায্য করে, অনেকাংশে টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে – আরও কতো কি।
এতো গুলো গুণ দেখে তো মনেই হয় – না, এই তো পৃথিবীর মানুষ পেয়ে গেছে সঞ্জীবনী পাতা। সত্যিই কি ঐ একটি কুড়ি দু’টি পাতার মধ্যে লুকিয়ে আছে মানুষের প্রান ভোমরা? মনে হয় না – এখানেও আছে চায়ের সেই অতি পরিচিত ক্যাফিনের কেরামতি। অতিরিক্ত এই অমৃতও রাতের ঘুম উড়িয়ে দিতে পারে। দিতে পারে অন্যান্য অনেক শারীরিক অস্বস্তি, অনেক ওষুধের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হতে পারে বিষাক্ত। এখনো, সবুজ চায়ের সমস্ত গুণ ও দোষ গবেষণা সাপেক্ষ।
তবে সে যাই হোক, এই সবুজ চায়ের মোহে পড়ে শীতের দুপুরে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে চুমুক দিতে কার না ভালো লাগে। চা যে আমার সকল চাওয়ার সঙ্গী, এমনকি এই পোস্টটি লেখার সময়ও এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা আমার সঙ্গ দিচ্ছে।