এখানে Montjuïc পাহাড়ের একদম উপরে ক্যাসলের পাথুরে চত্বরে এসে বার্সিলোনা শহরের বিস্তার দেখা যায়, দেখা যায় একদিকে আধুনিক বার্সিলোনার বেড়ে ওঠা আর এক দিকে দিগন্ত প্রসারিত নীল সমুদ্রের বুকে জাহাজের আনাগোনা, বন্দরের ব্যস্ততা। শহরের বিস্তারের দিকে চোখ রাখলে দূরে সাগ্রাদা ফেমিল্যার উঁচু চূড়া নজর এড়ায় না। আবার আরেক দিকে নজর এড়ায় না বার্সিলোনার বিখ্যাত আধুনিক টাওয়ার Torre Agbar। বিকেলের দিকে এলে দেখা যায় বার্সিলোনার বুকে, সমুদ্রের ওপারে রক্তিম সূর্যাস্ত।
দু’রকম উপায়ে এই পাহাড়ের উপরের ক্যাসলে আসা যায় – পাহাড়ের গায়ে তৈরি পার্কের পথ ধরে হেঁটে বা কেবল কার ‘Teleferic de Montjuic’ দিয়ে। জুলাইয়ের সেই সকালটি খুবই উজ্জ্বল ছিল – ঝলমলে দিনে নীল আকাশের নীলিমা ঝুঁকে পড়েছিল পাহাড়ের উপরে, তাই আমরা ঠিক করলাম ওঠার সময় কেবল কার নিয়ে নেব ও ফেরার সময় পাহাড়ের পার্কের জঙ্গুলে পথ ধরে হেঁটে হেঁটে দেখতে দেখতে নেমে আসবো।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। মেট্রো ষ্টেশন থেকে পাহাড়ের উপরে ক্যাসেলের মুখে পৌঁছে যেতে খুব একটা সময় লাগে না। ক্যাসলের রুক্ষ পাথুরে চত্বরে পুরনো দিনের স্তব্ধ কামান সমুদ্রের দিকে মুখ করে আছে, আর ক্যাসল ঘিরে সুন্দর বাগান, হাঁটার রাস্তা। ক্যাসলের পাথরে বাঁধানো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নীল সমুদ্রের নোনা হাওয়া, উজ্জ্বল দিন – উপভোগ করা যেন ক্যাসলে আসার আর এক বাড়তি পাওনা। আবার এখানের ঐতিহাসিক পরিবেশে সবাই ঘোরাঘুরি করতে করতে ক্যামেরায় চোখ রাখে। মোটকথা, এই ক্যাসল পাহাড় ও পার্কে প্রায় সারাদিনই কাটিয়ে দেওয়া যায়।
বার্সিলোনার ইতিহাসের বহু যুদ্ধ, রাজনৈতিক উত্থান পতনের সাক্ষী এই ক্যাসল বর্তমানে বার্সিলোনার মিউনিসিপালিটির অন্তর্গত, ও ক্যাসলের ভেতরে একটি মিলিটারি মিউজিয়ামও আছে। আবার কখনো বা এখানে বার্সিলোনার অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ইত্যাদি হয়।
Catalan Revolt এর সময় তৈরি হয়েছিল এই দুর্গ, আবার এই ক্যাসল তৈরির এক বছরের মধ্যেই তার প্রথম যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছিল। তারপর, এই দুর্গের নানা ভাঙ্গা গড়ার পরে খাড়া হয়েছিল এই ক্যাসলের মজবুত, শক্ত তথা আজকের এই রূপ। ইউরোপের ইতিহাসে নেপোলিয়ানের যুদ্ধ কালে, নেপোলিয়ানের সৈন্যরাও এই ক্যাসল দখল করেছিল।
আসলে, মনে হয়, যে কোন শহর বা জায়গার কাছে এই ধরণের ঐতিহাসিক স্থাপত্য যেমন এক ঐতিহাসিক সম্পদ, তেমনি এক অর্থনৈতিক সম্পদও বটে – আর সেটা ইউরোপের চেয়ে আর ভালো কে জানে। তাই এরা, যা কিছু পুরনো, ঐতিহ্য ময়, যার গায়ে এক কণা হলেও ইতিহাস জড়িয়ে আছে তা খুবই সুন্দর করে সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ করে। জঙ্গল পাহাড়ের মধ্যে এই অতি পুরনো ক্যাসলকে একটু আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে, সাধারণের জন্যে করে দেয় সুগম্য। এমনকি, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারও করতে জানে।