ইউরোপের পথে চলতে চলতে কতো ধরণের অদ্ভুত বিমূর্ত শিল্পের সম্মুখীন হয়েছি, তার ঠিক হিসাব নেই, হয়তো বা কোথাও বিমূর্ত শিল্পের ধরণ এতোই বিমূর্ত – যে চোখ এড়িয়েও গেছে। তবে, হেলসিঙ্কির সমুদ্রতীরের এক নির্জন পার্ক – Sibelius এ এসে যখন একাকী দাঁড়িয়ে থাকা এক অদ্ভুত বিমূর্ত শিল্প – Sibelius মনুমেন্টের সম্মুখীন হই একটু আশ্চর্য হই বই কি।
নানান আকারের ষ্টীলের ছয়শোটা পাইপ পাশাপাশি জুড়ে দিয়ে তৈরি বিশাল এই বিমূর্ত শিল্প অর্গান পাইপের ওজন প্রায় চব্বিশ টন। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এক তরঙ্গ স্তব্ধ হয়ে আছে। সমুদ্রের তীরে তীব্র হাওয়া চললে অনেক সময় পাইপের ভেতরে হাওয়ার চলাচলে নানা সুরে বেজে ওঠে এই স্ট্যাচু। ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত সুরকার Jean Sibelius এর সৃষ্টির স্মরণে এই Sibelius পার্ক ও মনুমেন্ট। বিখ্যাত ফিনিশ ভাস্কর Eila Hiltunen এই মনুমেন্টের নক্সা করেন ও আজ ফিনিশরা তাঁকে তার এই সৃষ্টির জন্যেই মনে রাখে।
তাঁর তৈরি এই আশ্চর্য মনুমেন্টটি এতোই বিখ্যাত হয়ে যায় যে নিউ ইয়র্কের ইউ এন এর প্রধান কার্যালয়ের মাঠে এর এক ছোট্ট সংস্করণ স্থান পেয়েছে।
আর, হেলসিঙ্কির এক প্রান্তে সবুজ এই পার্কের প্রধান আকর্ষণই হল এই মনুমেন্ট। তাই হেলসিঙ্কি এলে এই পার্কের এই মনুমেন্ট দেখতে প্রচুর টুরিস্ট ভিড় করে।
বিশাল এই পার্কে প্রথমে ঢুকেই কিন্তু, এই আশ্চর্য মনুমেন্টের দেখা পাওয়া যায় না, বেশ হেঁটে গাছের ভিড়ে ভেতরের দিকে গিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। অবশ্য, পার্কের মুখেই বিকেলের দিকে এক ঝাঁক জাপানিস টুরিস্টের ভিড় অনুসরণ করে পৌঁছে যাওয়া যায়।
Sibelius মনুমেন্টটি বেশ একটু উঁচু জায়গায়, পাথরের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। জাপানিস টুরিস্ট দলের ভিড় সরে গেলে, মনুমেন্টের সামনে বসে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
শেষ বিকেলে জলের ধারের এই পার্কে ছায়া ঘনায়, জনশূন্য হয়ে পড়ে চারিদিক। আমরাও জলের ধারের বাঁধানো রাস্তা ধরে হাঁটি। সমুদ্রের জলো হাওয়া Sibelius মনুমেন্টের পাইপ গুলোয় ঢুকে এক তীক্ষ্ণ সিটি দিয়ে যায়। এখানে মানুষ আসে, দেখে। পৃথিবীতে কেউই থাকে না, শুধু থেকে যায় তাঁর সৃষ্টি, তাঁর পদ চিহ্ন। আর এখানে এই নির্জনে সমুদ্রের উদাসীন হাওয়া ও মানুষের অদ্ভুত সৃষ্টি এই শিল্পের অক্লান্ত যুগল বন্দী চলে অনন্তকাল ধরে।