ঘন কালো মেঘে মাঝ ফেব্রুয়ারির সেই দিনটি ছিল খুবই ধূসর। সুইজারল্যান্ডে এসে প্রথম দিনেই এমন আবহাওয়া দেখে মন খারাপ হতেই পারে। তার উপরে আবার হোটেল ছেড়ে বেরোতে না বেরোতেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি, বেড়ানোর আনন্দে আক্ষরিক অর্থে জল ঢেলে দেয় আর কি। অবশ্য পাহাড়ে বৃষ্টি খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিন্তু, বেড়াতে এসে দমে গেলে তো চলে না। কোন না কোন উপায় ঠিক বেরিয়ে যায়। ইউরোপে বেড়ানোর কয়েকটা নিয়ম সর্বদাই মাথায় রাখার চেষ্টা করি, যেমন এখানে এসে, সুইস পাহাড়ে বৃষ্টি নামলে ঢুকে পড়া যায় যে কোন মিউজিয়ামে। সুইস পাস অধিকারীদের জন্যে অনেক মিউজিয়ামের দরজা খোলা।
তাই, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন Lausanne পৌঁছলাম, প্রথমেই Ouchy র অলিম্পিক পার্ক মিউজিয়ামে পৌঁছে গেলাম। সুইজারল্যান্ডের French-speaking এলাকায় লেক জেনেভার পাশের এই ছোট্ট শহরকে পৃথিবীর মানুষ অলিম্পিক শহর বলেও জানে। এই শহরেই আছে International Olympic Committee র প্রধান দপ্তর। তাই, পৃথিবী বিখ্যাত এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আধুনিক ও রঙিন ইতিহাসের নানা সময়ের নানান জিনিসের সংগ্রহে সাজানো এই অলিম্পিক মিউজিয়ামে প্রতি দিন প্রচুর টুরিস্ট আসে। আধুনিক অলিম্পিকের সামগ্রী সংগ্রহে এই মিউজিয়াম পৃথিবীর সবচেয়ে বড়।
মিউজিয়ামের সামনের অলিম্পিক পার্কে এই বৃষ্টিতেও অলিম্পিক মশালের শিখাটি জ্বলছে। তাছাড়া, পার্কের আরও অন্য আকর্ষণ হল – পার্কটি ফ্রান্সের বিখ্যাত শিল্পী রোডিনের তৈরি খেলা ধূলা সংক্রান্ত স্ট্যাচু দিয়ে সাজানো। লেক জেনেভার পাশে এই মিউজিয়ামে ঢোকার মুখেই আছে অলিম্পিকের পতাকা ধারী একদল স্ট্যাচু। এই বৃষ্টিতে অলিম্পিক পার্কে একটাও লোক দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে, মিউজিয়ামের ভেতর কিন্তু প্রচুর টুরিস্ট, প্রচুর ছাত্র ছাত্রীদের ভিড়ে গমগম করছে। বিশাল স্ক্রিনে বিগত দিনের অলিম্পিকের বিজয়ী মুহূর্তের চলমান ছবি, মশাল নিয়ে দৌড়ের চলচিত্র চলছে।
এক দিকে নানা সময়ে অলিম্পিক মশাল সংগ্রহ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অলিম্পিকের গোল্ড, সিলভার, ব্রোঞ্জ মেডেলের বিবর্তনের সংগ্রহ, নানা সময়ের অলিম্পিক ক্রীড়া সামগ্রীর বিবর্তনের সংগ্রহ, প্যারা অলিম্পিকের নানান আনুষঙ্গিকের সংগ্রহ দেখতে দেখতে অনেক সময় কেটে যায়। এখানে এসে সবাই, পৃথিবীর সমস্ত দেশ, জাতিকে যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এক করেছে তার মহান ইতিহাসের টুকরো মুহূর্তের সংগ্রহ দেখে রোমাঞ্চিত হয়।
উপস্থিত, ক্রীড়াপ্রেমী ছোট ছাত্র ছাত্রীর দল এখানে এসে যেন, তাঁদের নায়কের ছোঁয়া পায় – তাঁদের টি শার্ট, জুতো, বেসবল ব্যাট, সাইকেল ইত্যাদির সংগ্রহ দেখে। কার্ল লুইস, যে জুতো পড়ে চুরাশির অলিম্পিকে সোনা জিতেছিল, সেই জুতো দেখে তারাও হয়তো অলিম্পিকে সোনা জেতার স্বপ্ন দেখে। হয়তো, স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নের জন্যে পরিশ্রমের আরেক বাস্তব নাম ‘অলিম্পিক’। আর সেই কচিকাঁচাদের চোখে স্বপ্ন বুনে দেয় এই মিউজিয়ামের সংগ্রহ।