ধনুষ্কোটি সৈকতে (Dhanushkodi, Tamil Nadu, India)

ধনুষ্কোটি নামটার মধ্যেই কেমন যেন এক পৌরাণিক আভাস পাওয়া যায়। রামেশ্বরম থেকে ফেরার পথে যখন ড্রাইভার জানাল এবার আমরা যাব – ধনুষ্কোটি সৈকত, নামটি শুনেই ভালো লাগলো। মনে হল, বাঃ জায়গার নামটা তো খুবই সুন্দর। ধনুষ্কোটি সৈকতে পৌঁছে মনে হল, সত্যি নামের সঙ্গে জায়গার সৌন্দর্যও চমৎকার মানানসই।

ধনুষ্কোটি ভুতুরে শহরের পাশেই এই উদার সৈকত। ১৯৬৪র ভয়ানক সাইক্লোন  এই ধনুষ্কোটি শহরটিকে নিমেষে ধ্বংস করে দেয়। সাইক্লোনের আগে এখানে নাকি প্রচুর টুরিস্ট আসতো, এই জায়গায় পর্যটন শিল্পের বেশ প্রসারই ঘটছিল, কিন্তু, এখন শুধু পড়ে আছে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ। এখন এখানে মানুষের আনাগোনা খুবই কম, এলেও দিনের আলো থাকতে থাকতেই সবাই ফিরে যায়। কেউই থাকে না এই অভিশপ্ত, ভুতুরে শহরে, এখানে কোন থাকার ব্যবস্থাও নেই। সমুদ্র এখানে এতোই আগ্রাসী যে পথের কিছু অংশে ঢুকে পড়েছে সমুদ্রের জল। পথের পাশে গাছ পালারা ডুবে আছে নোনা জলে।

ভারতবর্ষের এই শেষ ভূমি খণ্ড থেকে দেখা যায় শ্রীলঙ্কা, জল পথে মাত্র আঠারো মাইল দূরেই শ্রীলঙ্কা। কথিত আছে, রামচন্দ্র নাকি এখানেই তৈরি করেছিলেন রাম সেতু, এখান দিয়েই পার হয়েছিল বানরসেনা। লঙ্কা জয় করে ফেরার পথে লঙ্কার নতুন রাজা বিভীষণের অনুরোধে নাকি রাম, নিজের ধনুকের শেষ অংশ দিয়ে এই সেতু ভেঙ্গে দেন – তাই এই জায়গার নাম হয়ে যায় ধনুষ্কোটি, মানে ধনুকের শেষ অংশ। সেই রামও নেই, নেই রাবণ – কিন্তু মানুষের বিশ্বাসে, পুরাণে রয়ে গেছে তারা। আবার আশ্চর্য ভাবে এখানে এক ভগ্ন রেল সেতুর অবস্থান স্থানীয় মানুষের সেই সরল বিশ্বাসকে বোধহয় আরও ইন্ধন যোগায়।

এখানে সমুদ্র আপন মনে পাথুরে তীরে ঢেউ ভাঙ্গে, আর তার সঙ্গী হয় স্থানীয় ধীবর ও তার নৌকো। পাতার তৈরি ছোট্ট ছোট্ট ছাউনির নীচে সমুদ্র তীরে ধীবরেরা বসে মাঝ সমুদ্রে চোখ রাখে – কখন ফিরবে তার নৌকো। আবার শুনেছি, এখানে ধীবরেরা খালি হাতেও মাছ ধরতে পারে।

দেখি, ছোট ছোট ট্রাক অপেক্ষা করে আছে তীর্থযাত্রীদের জন্যে। শ্রীরামের কর্ম ভূমি দেখতে অনেক তীর্থ যাত্রী ঐ ছোট ট্রাকে চড়ে ভারতবর্ষের শেষ ভূখণ্ড পর্যন্ত যায়। তবে সমুদ্রের জোয়ার ভাঁটা ও তীর্থযাত্রীর সংখ্যার উপরে নির্ভরশীল সেই ট্রাক যাত্রা।

উদার প্রকৃতির বুকে সাদা বালু তটে এসে আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অথচ বাতাসে এক বিন্দু ঠাণ্ডার শিরশিরে অনুভুতিও নেই, আশ্চর্য মনোরম এক আবহাওয়া এখানে।

উজ্জ্বল দিনে আকাশ নীল আর সমুদ্র নীলের মাখামাখি দেখতে দেখতে কখন যে ফিরে আসার সময় হয়ে যায়, সবাই একে একে ফিরে যায়, নির্জন ধনুষ্কোটি সৈকত আরও নির্জন হয়ে যায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in India, Tamil Nadu, Travel and tagged , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s