হাজার বছর ধরে মানুষের বেঁচে থাকার স্পন্দন অনুভব করেছে এই পুরনো শহরের প্রতিটি গলি, স্কোয়ার। লেক জেনেভার উল্টো দিক ধরে হেঁটে একটু ঢালু রাস্তা দিয়ে উপরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায় পুরনো জেনেভার আধুনিক প্রতিচ্ছবি। সুইস এই শহরে ফ্রেঞ্চ ভাষার আধিপত্য বেশী, তাই পুরনো জেনেভাকে ফরাসী ভাষায় বলে ভিয়ে ভি ( Vieille Ville)।
শহরের পথে পায়ে পায়ে আবিষ্কার করে নেওয়া যায় এই শহরের পুরনো স্থাপত্য, চার্চ, মিউজিয়াম, ভাস্কর্য, প্রচুর দোকান, আর্ট গ্যালারী। গরমের দিনে, দেখা যায় গলির মোড়ে খোলা রেস্টুরেন্টে মানুষের নিশ্চিন্ত সময় কাটানোর সুখ, সুন্দর টবে নানান ফুল রাস্তার শোভা বাড়ায়। শহরের পথে চলতে চলতে শোণা যায়, মানুষের হাসি আনন্দের টুকরো ধ্বনি, বা কোন এক বাস্কারের বাজানো মন ভোলানো সুর – যেন সর্বদাই এক আনন্দ যজ্ঞ চলেছে এই শহরের অলি গলিতে। এই শহরের মানুষের যেন কোন দুঃখ, অভাব নামে কোন অনুভূতিই নেই! নাকি আছে, তার প্রকাশ আলাদা।
এই শহরের হাজার বছরের পুরনো রোমান বাজার স্কোয়ারে আজও চলে বেচাকেনা, তবে আজ সেই রোমান স্কোয়ারের চারিদিকে প্রচুর রেস্টুরেন্ট, সমস্ত আধুনিক ব্র্যান্ডের দোকানে চলে আধুনিক শপিং। বিকেলের দিকে শুধুই দেখার আনন্দে, ঘোরার আনন্দে হাঁটতে হাঁটতে ঢালু পথ ধরে পুরনো জেনেভাকে জানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। এই শহরে নাকি অনেক গোপন রাস্তা আছে, বছরের কোন এক দিন সেই গোপন রাস্তা খুলে দেওয়া হয় টুরিস্টদের জন্যে। গোপন গলি পথ, রাস্তা ধরে এই শহরকে আবিষ্কার করার মজাই নাকি আলাদা। তবে আমরা সহজ পথই ধরেছি – যে ঢালু পথ নিয়ে চলেছে উপরের পাহাড়ের দিকে, পুরনো স্কোয়ারে।
রোমান যুগে যে স্কোয়ারে বেচা কেনা চলতো নাম তার Place du Bourg-de-Four, আজ সেই স্কোয়ার আধুনিক জেনেভার হৃদ স্পন্দন বলা যেতে পারে। জেনেভার প্রচুর বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এখানে বর্তমান। বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল Restaurant au Carnivore।
প্রচুর স্যুভেনিরের দোকান আর টুরিস্টের চলাফেরায় বহু প্রাচীন এই জায়গাতে এখনো যেন সময়ের চাকা থমকে আছে। ক্রিসমাসের সময়ে নাকি রোম্যান্টিক নরম আলোয় সাজানো হয় এই পুরনো স্কোয়ার।
রাস্তার ধারে এক মনে শিল্পী রাস্তাতেই ছবি এঁকে চলেছে – অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখছে, যার ভালো লাগছে পাশে রাখা ছোট্ট কৌটোতে দিয়ে যাচ্ছে কিছু সুইস ফ্রাংক। পুরনো জেনেভার পথে চলতে চলতে জেনেভার চলন্ত জীবন ছবি দেখতে দেখতে যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে যাই। পথচারী মানুষের উষ্ণতায় পুরনো এই পরিবেশে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়। বিকেল শেষে পাহাড়ের গায়ে এই শহরের বুকে সন্ধ্যা নামার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।