তুলুসের হাওয়া ঘর (St Martin du Touch Wind mill, Toulouse, France )

দক্ষিণ ফ্রান্সের বহু জায়গার শহর ছাড়িয়ে একটু বাইরে গ্রামের দিকে গেলে উঁচু টিলা বা পাহাড়ের উপরে দেখা যায় হাওয়া ঘর বা উইন্ড মিল। বহু প্রাচীন ফরাসী জীবন যাপনের সাক্ষী বয়ে নিয়ে, আজ সেই স্তব্ধ মিল গুলো অতীতের অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ফরাসী গ্রামীণ দৃশ্যপটের সৌন্দর্য বর্ধন করছে, ব্যস্ত আধুনিক দিনের প্রজন্মকে উপহার দিচ্ছে এক প্রাচীনতার ছবি। নিজেদের টেকনোলজিক্যাল ক্ষমতা ও ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয় ঐ মিল গুলো।

দক্ষিণ ফ্রান্সের কোন কোন জায়গার উইন্ড মিলের ভেতরে সিঁড়ি দিয়ে উপরেও যাওয়া যায়। সাধারণত উঁচু জায়গায় যেখানে প্রচুর হাওয়া, সেখানে উইন্ড মিলের অবস্থানের কারণে, সেখান থেকে পুরো জায়গাটার বাঁধনছাড়া দৃশ্য দেখা যায়।

দক্ষিণ ফ্রান্সের কোন কোন শতাব্দী প্রাচীন উইন্ড মিল গুলোকে মেরামত করে পুরনো আকার বজায় রেখে চালু করা হয়েছে। আর মূলত বাচ্চাদেরকে হাতে নাতে ইঞ্জিনিয়ারিঙের ইতিহাস শেখানোর জন্যে ও টুরিস্টদের জন্যে ব্যবহার হয়।

ছুটির দিনে উইন্ড মিলের নীচে শিক্ষামূলক ভাবে, প্রাচীন কালে কি ভাবে উইন্ড মিলের সাহায্যে ময়দা তৈরি হত, বাচ্চাদের ও টুরিস্টদের তার নমুনা দেখানো হয়। বলা যায়, যে সমস্ত ফরাসী গ্রামে উইন্ড মিল আছে, সেগুলো অনেকটা স্থানীয় ঐতিহ্যের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, হাওয়া ঘর ওদের বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর জুন মাসে ফ্রান্সের গ্রামের উইন্ড মিল গুলোকে আরও ভালো ভাবে সংরক্ষণের জন্যে পালন হয় France’s Countryside Heritage and Mill Days।

তুলুস শহর কেন্দ্রের একটু বাইরে St Martin du Touch  নামে প্রাচীন এক গ্রামের শুরুতে এক ছোট্ট টিলার উপরে স্তব্ধ এক উইন্ড মিল খুবই সুন্দর ভাবে সাজানো আছে। উইন্ড মিলের এক পাশ দিয়ে চলে গেছে গাড়ির রাস্তা, আর এক পাশ দিয়ে ব্যস্ত হাই ওয়ে।

এই গ্রামটি বহু আগে তুলুসের বাইরে আলাদা স্বতন্ত্র এক গ্রামই ছিল, কিন্তু বিস্তারিত তুলুস দিনে দিনে তুলুসের আশেপাশের অনেক গ্রামকে নিজের ভেতরে করে নিচ্ছে, তাই এখন এই গ্রামকে তুলুসের এক অংশ বলা যেতে পারে, শুধু এই উইন্ড মিলই এখানে সেই গ্রামের অস্ত্বিত্বকে জানান দিচ্ছে। উইন্ড মিলকে ঘিরে এক টুকরো সবুজ পার্ক ও সাজানো জঙ্গলের মধ্যে ছুটির দুপুরে অনেকেই সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন গ্রামের ছোঁয়া পেতে এখানে এসে সময় কাটায়, ছোট পিকনিক করে, কিংবা শীতের দুপুরে শুধুই রোদ পোহায়।

শীতের হলুদ উজ্জ্বল দুপুরে সবুজ ঘাসে শুয়ে, পাশের Blagnac এয়ারপোর্টে একে একে এরোপ্লেনের ওঠা নামা দেখি, ভালো লাগে। শতাব্দী প্রাচীন ফরাসী জীবনের সাক্ষ্য এই উইন্ড মিলের পটভূমিতে আধুনিক সময়ের এগিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে, গতি দেখতে দেখতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়! বাতাস ঘন হয়, শীত আরও জাঁকিয়ে পড়ে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s