সুইজারল্যান্ডের জেনেভাকে কে না জানে – রাষ্ট্র সঙ্ঘের প্রধান কার্যালয়ের অবস্থান, শান্তি আলোচনা, জেনেভা কনভেনশন, রেড ক্রসের জন্যে সবাই আমরা কম, বেশী জেনেভাকে জানি। সেই জেনেভাকে যখন আরও বেশী করে জানার ও দেখার সুযোগ এলো, হাতছাড়া করি কি করে!
জেনেভাতে এসে মনে হয় সমস্ত বিশ্ব ও তার মানুষ এখানে এসে মিশেছে। এই ইউরোপিয়ান শহরে যত অন্য দেশের মানুষ দেখেছি, মনে হয় না অন্যান্য ইউরোপিয়ান শহরে দেখেছি। যেন এক বিশ্ব সম্মেলন চলছে।
সুইজারল্যান্ডের কাছে শিখতে হয় কি ভাবে টুরিস্টদের স্বাগত জানাতে হয়। এয়ারপোর্ট থেকে শহরের ভেতরে যাওয়ার জন্যে বাস, ট্রামের ফ্রি টিকিট বরাদ্দ সমস্ত টুরিস্টের জন্যে – যা কিনা এক ঘণ্টা কার্যকর, এই এক ঘণ্টার মধ্যে বাসে বা ট্রামে চেপে জেনেভার যে কোন প্রান্তে চলে যেতে কোন বাধা নেই। আবার হোটেলে চেক ইন করলেও জেনেভা ট্রান্সপোর্টের একটা ফ্রি টিকিট পাওয়া যায়। তবে অনেকেই সেই কথা জানে না, সম্প্রতি চালু হয়েছে।
এমনকি জেনেভা এয়ারপোর্টে ফ্রান্সের দিকের কাস্টমসের সুন্দরী ফ্রেঞ্চ মেয়েটিও সে কথা জানে না। যখন জিজ্ঞেস করলাম – আচ্ছা, শহরে যাওয়ার জন্যে ফ্রি টিকিট কোথায় পাবো? মেয়েটি অবাক হয়ে হেসে এমন ভাব করলো, – বলে কি? যেন বলতে চাইল ইউরোপে বা সুইজারল্যান্ডে ফ্রি টিকিট? যেখানে প্রতি পদক্ষেপে ইউরো চাই, সেখানে ফ্রি এর কথা বলছে?
তবে, সুইস কাস্টমসে জিজ্ঞেস করতেই জানিয়ে দিল, এমনকি সঙ্গে এসে দেখিয়ে দিল – জেনেভা এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনোর পথে এক কোণে এক অটোম্যাটিক টিকিট মেশিনে বোতাম টিপে সেই টিকিট নিতে হয়।
আগেও একবার জেনেভার গা ছুঁয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু ভালো করে দেখা হয়ে ওঠে নি। এবার এসে প্রথমেই চলে এলাম ইউনাইটেড নেশনসের সামনে। প্রতিদিন পৃথিবীর কতো মানুষ শুধু ইউনাইটেড নেশনস দেখতেই আসে তার ইয়ত্তা নেই।
ইউ এন এর সামনের চত্বরে বিশাল এক চেয়ারের ছবি যে কতো জায়গায় দেখেছি, সামনে এসে এর সঠিক আকাশ ছোঁয়া উচ্চতার আন্দাজ হল। জগতের সমস্ত লড়াই ঐ চেয়ারকে নিয়ে, চেয়ারে বসা নিয়ে, সেটা বোঝাতেই কি ইউ এন এর সামনে এই বিশাল চেয়ারের উপস্থিতি – কে জানে?
জেনেভা লেকের পাশে ইউনাইটেড নেশনসের সুন্দর ছবির মতো Ariana পার্কে ফুটে আছে নানা রঙের হাজার ফুল। ঝকঝকে পরিষ্কার দিনে দূরে দেখা যায় ফ্রেঞ্চ আল্পসের পাহাড় শ্রেণীর নীল রেখা। লেকের নীল জল ছুঁয়ে আসা ফুরফুরে হাওয়ায় পথ চলার ক্লান্তি নিমেষে জুড়িয়ে যায়। লেকের পাশে পার্কের গাছের ছায়ায় সুন্দর বসার জায়গা, সুদৃশ্য রেস্টুরেন্ট। মৃদু হাওয়ায়, সুন্দর দৃশ্যে, সবুজ গাছের ছায়ায় হরেক ফুলের ভিড়ে এখানের পরিবেশে এক অদ্ভুত শান্তি বিরাজমান।