জেনেভাকে যে কত জন কত রকম ভাবে জানে! কেউ একে জানে পৃথিবীর নামী কূটনীতিবিদের শহর হিসাবে, কেউ বা জানে এই শহর জন্ম দেয় বিজ্ঞানীদের, বিজ্ঞানীদের চিন্তা, জ্ঞানকে লালন করে এই শহর। আবার অনেকে পদার্থ বিদ্যার গভীরে না গিয়েও পদার্থের নতুন কণা হিগস বোসনের জন্ম রহস্যের জন্যেও জেনেভাকে জানে, তাই অনেকে জেনেভা এলে শহরকেন্দ্র থেকে একটু দূরে একবার CERN এর মিউজিয়াম দেখতে যায়।
যাইহোক, পুরনো জেনেভা শহরের অন্যতম আকর্ষণ Saint Pierre Cathedral বা St. Peter’s Cathedral, প্রায় সাড়ে আটশো বছর পুরনো এই ক্যাথিড্রালের গায়ে, আকাশ চুম্বী চূড়ায় প্রাচীন স্থাপত্য থেকে শুরু করে গথিক স্থাপত্যের নমুনা দেখা যায়। তাই, এই ক্যাথিড্রাল যেমন সাধারণ টুরিস্টদের আকর্ষণ করে তেমনি ইতিহাসবিদকেও আকর্ষণ করেছে বহু দিন ধরে। পুরনো জেনেভার এক বড় চত্বর জুড়ে এই ক্যাথিড্রালের অবস্থান। ক্যাথিড্রালের বিশাল কাঠের দ্বার টুরিস্ট ও ভক্তদের জন্যে সর্বদাই অবারিত।
যদিও বিগত দীর্ঘ সময় ধরে এই ক্যাথিড্রাল জেনেভার মানুষকে আশীর্বাদ করে গেছে, কিন্তু ষোল শতাব্দীতে জেনেভাকে নব রূপে সাজাতে, এই ক্যাথিড্রালের ভেতরের অনেক অংশ নতুন ভাবে সংস্কারের জন্যে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন, সজ্জা, সম্পদ, স্থাপত্য ধ্বংস করা হয়েছে, ভাগ্য বশত ইতিহাসবিদের জন্যে অতীতের কিছু ছবি রয়ে গেছে।
সম্প্রতি এই ক্যাথিড্রালের ভেতরে এক আরকিওলজিক্যাল সাইটে এই ক্যাথিড্রালের আরও কয়েকশো বছর পুরনো (4th century) অংশ, ছবি, দেওয়াল ইত্যাদি আবিষ্কার হয়েছে, ও ভেতরে এক ছোট্ট মিউজিয়ামও আছে, এবং তা দর্শকের জন্যে খোলা।
সাধারণত ইউরোপের পুরনো ক্যাথিড্রালের ভেতর যেমন সুন্দর ঝাড় লণ্ঠন, মোমবাতি, সারি বাধা কাঠের চেয়ার, বিশাল পাইপ অর্গান ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজানো থাকে, তেমনি ভাবেই সাজানো। ভেতরে উঁচু থামে, ও ছাদে আলো আঁধারির খেলা। ভেতরের পরিবেশে যেন এক গম্ভীর, নির্জন, শান্ত, বহু প্রাচীন সময়ের উষ্ণতা থমকে আছে।
শেষ বিকেলে ক্যাথিড্রাল চত্বরে খুব একটা লোক জন চোখে পড়ছে না। শুধু ক্যাথিড্রালের সিঁড়ির সামনে কালো পোশাক পরিহিতা এক বৃদ্ধা ভিখারিনী বসে কিছু সুইস ফ্রাংক চাইছে। কিন্তু, জেনেভা শহরে সুরক্ষার জন্যে ক্রমাগত দলে দলে টহল দিচ্ছে সুইস পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি তিন জন সুইস পুলিশ ভিখারিনীটির কাগজ পত্র দেখতে চাইল, বেশ কিছুক্ষণ জেরা করে ভিখারিনীটিকে সরিয়ে দিল ক্যাথিড্রালের সামনে থেকে, পুলিশের ভয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ভিখারিনী অন্য দিকে চলে গেল। পৃথিবীর সমস্ত উন্নতিশীল দেশের টাকা পয়সা যে দেশে গচ্ছিত আছে, যে দেশ পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ, সে দেশে ভিক্ষা যে শোভা দেয় না, তাও আবার বিদেশী টুরিস্টদের কাছে ভিক্ষা চাওয়া! এতে যে ওদের দেশের বদনাম।