লক্ষণ তীর্থের বড় দীঘির জলে হাজার মাছেরা অপেক্ষা করে থাকে মানুষের জন্যে, তীর্থ যাত্রীর জন্যে। যেন ঐ পুকুরের অগুন্তি মাছেদের সঙ্গে গেটের সামনের মুড়ি ব্যবসায়ীদের কোন এক গোপন আঁতাত রয়েছে। সুযোগ বুঝে মুড়ি ব্যবসায়ীরা এখানে মুড়ির দাম করে দিয়েছে চারগুণ! সামনের মুড়ি ব্যপারির কাছ থেকে যতই মুড়ি কিনে পুকুরের জলে ছুঁড়ে দি না কেন, মাছেদের হাঁ যে বন্ধই হয় না। নিমেষের মধ্যে জলে ভাসমান মুড়ি গায়েব হয়ে যায়, ওরা গিলে নেয়। এমনকি, পুকুরের জলে হাত রাখলে মাছেরা এসে আঙ্গুলে গুঁতো মারে, পিছল শরীর দিয়ে কাতুকুতু দিয়ে যায় – এতোই সাহস ওদের! তবে, প্রতিদিন যত টুরিস্ট এখানে আসে ও মুড়ি কিনে কিনে জলে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মাছেদের খাওয়ায়, তাতে মনে হয়, মাছেরা ও মুড়ি ব্যবসায়ীরা কেউই অভুক্ত বা ক্ষুধিত থাকে না।
রামেশ্বরম দ্বীপের আশেপাশে রাম ও লক্ষণ কেন্দ্রিক প্রচুর তীর্থ স্থান আছে, তাঁদের মধ্যে লক্ষণ তীর্থম অন্যতম। কথিত আছে, এখানে লক্ষণ রামের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন। গভীর সেই পুকুরের পাশেই লক্ষণের এক ছোট্ট মন্দির আছে। বহু প্রাচীন এই মন্দিরের শুরুতেই প্রতিটি থামে ভক্তের মূর্তি স্বাগত জানায়। শোণা যায়, দ্রাবিড় সময়ের তৈরি এই মন্দির ও তীর্থ।
পুকুরের একদম মাঝে এক মণ্ডপে হনুমানের মূর্তি শোভা দিচ্ছে। যদিও টুরিস্ট ও ভক্তের আনাগোনা চলেছে – রামেশ্বরম এলে এই লক্ষণ তীর্থ একবার দেখে যায় সবাই, কিন্তু গভীর সবুজ দিঘির পাশে নির্জনে কিছুক্ষণ সময় কাটানোই যায়। বেশ এক ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব এই মন্দিরের ভেতরে, দীঘির পাশে। একমনে সাদা বক একটা মাছের জন্যে সাধনা করে চলেছে, সুযোগ পেলেই ছোঁ দিয়ে মাছ ধরবে।
ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক সম্পদকে ভালো করে দেখতে হলে, জানতে হলে মনে হয় সমস্ত তীর্থ স্থান গুলো ঘুরে দেখলেই অর্ধেকের বেশী দেখা হয়ে যাবে। এখানে ইতিহাস ও পুরাণের গল্প ঘোরে ফেরে স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে।
অতি সাধারণ ও সাবলীল ভাবে আমাদের এই বহু প্রাচীন ঐতিহাসিক সম্পদ গুলো রক্ষা হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে, ভক্তেরাই বাঁচিয়ে রেখেছে ভারতবর্ষের পর্যটন শিল্পকে, স্থাপত্যের মর্যাদাকে ও সর্বোপরি ঐতিহ্যকে।