অষ্ট্রিয়ার রাজকুমারী, ভিয়েনায় জন্ম। খুবই অল্প বয়সে ফ্রান্সের রানী হয়ে এসেছিল মারি এন্টোনিতে। সেই সময় অষ্ট্রিয়া ফ্রান্সের শত্রু ছিল, তাই লুই XVI এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে সন্ধি স্থাপনের প্রচেষ্টা ছিল।
চপল স্বভাবের কম বয়সী রানী গা ভাসিয়ে দিয়েছিল বৈভবে, সোনার চামচ মুখে নিয়ে যার জন্ম সে কি করে জানবে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের কথা। রানী জানতোই না সাধারণ ফ্রেঞ্চরা কি ভাবে বাঁচে। রাজনীতি, সাহিত্য, জ্ঞান বিজ্ঞান কোন কিছুর প্রতিই বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না রানীর। আগ্রহ ছিল দামী কাপড়, ফ্যাশন, হিরে জহরতের গহনা, বৈভবের প্রতি। রাজকার্যের চেয়ে প্যারিসের অপেরা, ক্যাসিনোর রাত জীবনের প্রতিই রানীর মন ছিল বেশী। রাজ কোষের অর্থের কথা চিন্তা না করে উদ্দাম খরচের হাত ছিল রানীর।
সেই সময়ে ফ্রান্সে রাজা রানীর জীবন যাপন ছিল সম্পূর্ণ ভাবে পাবলিক, ভোরের হাই তোলা থেকে শুরু করে সারদিনের জীবন যাপনে রানিকে ঘিরে প্রচুর মানুষের আনাগোনা। এক খোলা রঙ্গমঞ্চের মতো ছিল রানীর জীবন। যেটা রানীর একদম পছন্দ ছিল না। রানী লোকচক্ষুর আড়ালে নিজের এক গোপন জীবনযাত্রা চেয়েছিল।
তাই ভারসেই এর বিপুল ঐশ্বর্য যুক্ত প্রাসাদ থেকে দূরে জঙ্গলের মধ্যে রানী তৈরি করেছিল তাঁর স্বপ্ন জগতের এক রাজ্য ‘Petit Trianon’ । মনের মতো এক গ্রাম্য জগত – যেখানে ছিল গোয়াল ভরা গরু, ভেড়া, হাঁস, মুরগি। পুকুর ভর্তি মাছ, মাঠ জোড়া চাষ। সে ছিল রানীর এক ফ্যান্টাসির দুনিয়া। সেখানে প্রকৃতির কাছে রানী নিজেকে খুঁজে পেত। রানী বলেছিল – এখানে এসে আমার আমিকে পাই, নিজেকে দেখি, এখানে আমি রানী নই।
এদিকে ফ্রান্সের অবস্থা খুবই খারাপ। খাদ্যের দাম আকাশছোঁয়া, দেশের মানুষ খেতে পাচ্ছে না, প্যারিসের রাস্তা বিপ্লবীদের দখলে, দেশ ঋণে ডুবে আছে, একের পর এক চাষি ঋণের দায়ে জমি হারাচ্ছে। ফ্রান্সের মানুষের আশা ছিল রাজা পরিস্থিতির সামাল দেবে কিন্তু, রাজা ছিল চিন্তাশীল, পড়ুয়া। রাজকার্যে ছিল অনীহা। তাই সবার নজর ফিরল রানীর দিকে। কিন্তু, রানীর সে দিকে বিন্দুমাত্র খেয়ালই নেই। নিজের স্বপ্নের দুনিয়ায় মগ্ন রানী। ফ্রান্সের জনতা রানীর অহেতুক খরচকেই ফ্রান্সের খারাপ অবস্থার জন্যে দায়ী করল, জনরোষে পড়ল রাজা ও রানী।
এখানে এসে রানীর সেই দাম্ভিক, উল্লাস প্রিয়, ঐশ্বর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। এই জায়গা রানীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যেন খাপ খায় না। যার ভালো লাগে হিরে জহরত, প্যারিসের অপেরা তাঁর যে এমন এক নির্জন, সহজ, সুন্দর, সবুজ এক স্বপ্ন জগত থাকতে পারে তা যেন ঠিক বোঝা যায় না।
আজও রানীর Petit Trianon এর ছোট ঘর বাড়ি, খামার, শান্ত পরিবেশ, চাষের ক্ষেত, শীতের বিকেলে এক অদ্ভুত রূপকথা ছবি আঁকে। এ যেন রানীর মেয়েবেলার খেলা ঘরের ছবি। এখানে যেন রানী মেয়েবেলার সহজ জীবন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। শীতের বিকেলে আঁকাবাঁকা পথে হেঁটে যেতে যেতে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায় মন। সূর্য শেষ বেলার আলো ছড়িয়ে দিয়ে যায় সেই ছোট্ট মেয়েটির খেলাঘরে।
Your story telling is amazing…
Thank you. I am glad that you liked…