মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের তীরে, গ্রীকদের দ্বারা স্থাপিত ফ্রান্সের এই শহর – ফ্রেঞ্চ রিভেইরার রাজধানী, পরবর্তী কালে, মানে উনিশ শতাব্দীতে, ইউরোপের এলিট ক্লাস মানুষের ছুটি কাটানোর এক ঠিকানা ছিল।
তারপরে, তো এই শহরের উজ্জ্বল সোনালি সামারের দিন, নীল সমুদ্র ও উদার মুক্ত চিন্তা ধারা, শিল্প চেতনা বহুদিন ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষকে আকৃষ্ট করে গেছে, প্রেরণা দিয়ে গেছে। আকৃষ্ট করেছে ইউরোপের নাম করা শিল্পীদের – তাই এই শহরের আনাচে কানাচে আজও সেই সময়ের প্রচুর কথা, গল্প ও ছবি জড়িয়ে থাকে।
শুধু যে শিল্পী তা নয় – আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান বিজ্ঞান, টেকনোলোজি ও অর্থনীতির চর্চার আধারও কিন্তু ফ্রান্সের এই শহর। আজ এই শহর শুধু যে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের গন্ত্যব্য তালিকায় স্থান পায় তা নয় – ব্যবসায়িক প্রগতির এক উল্লেখ যোগ্য ঠিকানাও বটে।
ফ্রান্সের এই শহরকে প্রকৃতিও যেন প্রান দিয়ে সাজিয়েছে – নিসে ফেব্রুয়ারির ফুলের মরশুম যেন সেই কথাটাই মনে করিয়ে দেয়। প্রতি সকালে শহর কেন্দ্রের Cours Saleya র ফুল বাজার, তাজা সবজি ও ফলের বাজার ঘিরে মানুষের আনাগোনা এই শহরের প্রাণচাঞ্চল্যের ছবি ফুটিয়ে তোলে।
জন বসতির দিক দিয়ে ফ্রান্সের পঞ্চম বৃহত্তম এই শহরকে ঘিরে তাই বহু গল্প, বহু মানুষের জীবন, বহু ছবি জড়িয়ে থাকে – আর এই শহরে যারাই আসে, ফরাসী এই রোম্যান্টিক শহরের প্রান চাঞ্চল্যকে অনুভব করতে এই শহরের ঐতিহাসিক ও রঙিন গলিপথ ধরে হেঁটে চলে – আর হাঁটতে হাঁটতে দু’পাশে ফ্রান্সের Belle Époque বা Beautiful Era র অতি সুন্দর ও সাজানো বিশেষ ধরণের স্থাপত্য কিংবা বারোক স্টাইলে তৈরি আশ্চর্য স্থাপত্য নজরে পড়তে বাধ্য – সেই স্থাপত্য গুলো যেন এই শহরের রোম্যান্টিক মেজাজের সঙ্গে আরও ভালো ভাবে খাপ খায়।
উজ্জ্বল সোনালি দিনে, বড় বড় ফ্রেঞ্চ জানালা দিয়ে ঝুলে পড়া লতানে ফুল গাছ, কিংবা খড়খড়ির জানালায় রোদের আলো ছায়ার আঁকিবুঁকি – সবই যেন এই শহরের মানুষের জীবন যাপনের সুন্দর মার্জিত, অথচ সহজ ও সাধারণ এক ছবি তৈরি করে।
তাই, বোধহয় নিস পৃথিবীর মানুষের ভ্রমণ তালিকার প্রথম দিকেই থাকে। আর্ট ও কালচারের দিক দিয়ে প্যারিসের ঠিক পরেই নিসের নাম চলে আসে – এবং এই শহর প্রচুর আর্ট মিউজিয়মের ঠিকানা।
এই শহরে দিন যেমন উজ্জ্বল সোনালি ও নীল, রাত তেমনি মোহময়ী, আলোকিত। আর গরমের সময়ে সেই মোহময়ী আলোকিত রাত গুলো আরও সেজে ওঠে জ্যাজ মিউজিক উৎসবের সুরে – নিস তখন মিউজিক প্রিয় মানুষের ঠিকানা হয়ে ওঠে। আর যে কোন সময়েই সেই শহরে গিয়ে, সেই শহরের একমুঠো সময়ের ছবি, দিন রাতের ছবি নিজেদের জন্যে নিয়ে আসতে কেউই ভোলে না।
অনেকদিন বাদে আপনার ব্লগ পড়লাম…ভাল লাগল… 🙂
ধন্যবাদ …