ঐতিহাসিক নিস শহরের গলি ধরে হাঁটতে গিয়ে, দেখতে গিয়ে, গলির মোড়ে ফরাসী মিউজিকের সুর শুনতে গিয়ে – ফ্রেঞ্চ রিভেইরার অন্যতম বৃহত্তম ও সুন্দরতম শহর নিসের কথা ও গল্প যেন অনেক বাকি রয়ে যায়।
ফ্রেঞ্চ রিভেইরা মানে, প্রায় একশো ত্রিশ কিলোমিটারের কাছাকাছি দীর্ঘ অপূর্ব মেডিটেরিয়ান কোস্ট – আর সেই দীর্ঘ মেডিটেরিয়ান কোস্টের সব সৌন্দর্যের শুরুটা হয় নিস শহর থেকেই – আর তাই নিস বন্দরও ফ্রেঞ্চ রিভেইরার এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসাবে বিখ্যাত। নিস শহরকে দেখতে হলে – ঐতিহাসিক নিস শহরকে জড়িয়ে থাকা এই বন্দরকে তাই এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল। তাছাড়া, ফ্রান্সের বিখ্যাত দ্বীপ ‘করসিকা’র সঙ্গে জলপথে যোগাযোগের রাস্তাও এই নিস বন্দর।
বলা যায় – পশ্চিমে প্রভন্স সীমান্ত, উত্তরে আল্পস ও পূর্বে ইতালির মধ্যে অবস্থিত এই সুন্দর শহর কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, অভিনেতা সবারই প্রিয় শহর, প্রিয় গন্ত্যব্য, প্রিয় ছুটি কাটানোর জায়গা। অতীতে সমারসেট মম থেকে শুরু করে পাবলো পিকাসো – নিস শহরের জীবন যাপনকে ভালোবেসে, বহু সময় এখানে কাটিয়েছিলেন।
এমনকি, আজকের বহু ধনী ব্যবসায়ী ও সেলিব্রিটিদের সাময়িক ঠিকানা এই নিস শহর – আর নিস বন্দরে দাঁড়ানো প্রচুর দামী super-yacht তাদের উপস্থিতির আভাস দেয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর নব্বই শতাংশ super-yacht অন্তত একবার নিস বন্দরে এসে নোঙর ফেলেছে। তাই নিস বন্দর, প্রতি বছর নিস শহরের অর্থনৈতিক উন্নতির এক গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিস শহরের এই বন্দর এলাকায় পৃথিবীর যত ধনী মানুষের superyacht দাঁড়িয়ে থাকুক না কেন – এই অঞ্চলের ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট সবই কিন্তু সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে – আর সেটাই হয়তো নিস শহরের আশ্চর্য এক দিক।
পৃথিবীর প্রচুর ধনী মানুষের বসবাস, অথচ এখানের জীবন যাপন মাটির অনেক কাছাকাছি। তাই, এই অঞ্চলে এসে, বন্দরের সামনের অতি সাধারণ ও খাঁটি এক ফরাসী ক্যাফেতে বসে, এক কাপ কফি নিয়ে, চুমুক দিতে দিতে দামী নৌকো গুলোর আসা যাওয়া, দেখে সময় কাটাতে অনেকেই ভালোবাসে।
কিংবা চাইলে – নিস বন্দর থেকে ক্রুজ নিয়ে ফ্রেঞ্চ রিভেইরার অন্যান্য শহর গুলোকে আবিষ্কার করা যায়, বা মেডিটেরিয়ানের বুকে জাহাজ নিয়ে যাত্রা করা যায় – নিসে নাকি এমন অনেক মানুষ আছে, যারা সামারের অনেকটা সময় ইয়ট নিয়ে মেডিটেরিয়ান সমুদ্রে ভেসে ভেসেই সময় কাটায়। এই শহরের গলিতে, বন্দরে, অতি সহজ, সাধারণ থেকে শুরু করে তারকা খচিত জীবন যাপন – সবই দেখা যায়।