রবিবারের এক ঝকঝকে সকালে, একমুখ হাসি নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার একদল মহিলা ও পুরুষ দাঁড়িয়ে ছিল জাগ্রেবের সেই ক্যথিড্রাল চত্বরে।
মহিলাদের পড়নে ছিল লেসের তৈরি ধবধবে সাদা পোশাক, মাথায় লাল স্কার্ফ, পায়ে চামড়ার বুট জুতো, হাতে বেতের ঝুড়িতে নিজের বাড়ীর গাছের নানান ধরণের ফল, আর হাতে তৈরি ফ্রুট কেক নিয়ে, যখন দেখি একদল ক্রয়েশিয়ান মহিলা জাগ্রেব ক্যাথিড্রালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, সঙ্গে পুরুষদের পড়নেও ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় পোশাক – কৌতূহল বসতই একটু কাছে এগিয়ে গিয়েছিলাম – স্বভাবতই ওদের কাছাকাছি আরও অনেক কৌতূহলী টুরিস্ট ছিল, ফোটো তুলতে ব্যস্ত ছিল সবাই।
দেখি এগিয়ে যাওয়া মাত্রই হাতের বেতের ঝুড়ি থেকে কিছু আঙুর ও কেক বের করে আমাদের দিকে এগিয়ে দিল – ভাষা তো বোঝার কোন উপায় নেই, তাই ঐ দলের সম্বল ছিল অমলিন হাসি।
আসলে ওদের হাসি ও পোশাক দুইই সেই সকালে বহু টুরিস্টদের আকর্ষণ করছিল – ওদের সঙ্গে নিজেদের একটা ফোটো তুলে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেকেই আগ্রহী ছিল। আর টুরিস্টদের সঙ্গে ফোটো তুলতে ওদের কোন অনীহা ছিল না, কোন দাবী ছিল না – সাধারণত ইউরোপের জাতীয় পোশাক পরিহিত বা পরিহিতার সঙ্গে ফোটো তুলতে গেলে রীতিমত অর্থের বিনিময় করতে হয়।
যাইহোক, ইউরোপের বহু দেশ যদিও টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি, কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার মতো টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি দেশ আগে কখনো দেখেছিলাম বলে মনে করতে পারি নি। এই দেশটার যে শহরেই গিয়েছি, দেশটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সেই দেশের মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত আন্তরিকতা পেয়েছি, হাসিমুখে আপ্যায়ন দেখেছি।
ওদের সঙ্গে কিছু ফোটো তুলে ফিরে আসতে আসতে ভাবি – তোমাদের মুখের হাসি দেখতেই তো এত্ত পথ অতিক্রম করে তোমাদের দেশে গিয়েছিলাম, দেখে এলাম, তোমরা হাসতে জানো, বাঁচতে জানো, সাজতে জানো, সাজাতে জানো, আপ্যায়ন করতে জানো। ভালো থেকো, ভালো রেখো। তোমাদের মুখের ঐ হাসি যেন পৃথিবীর প্রতিটি কোণে সংক্রামিত হয়, মানুষের হৃদয়ে সংক্রামিত হোক ঐ হাসি।