July 2013, Finland.
এখানে চঞ্চল সরল কাঠবেড়াল গাছে নিজের ঘরে যেতে যেতে মানুষের আওয়াজ পেয়ে নির্ভয়ে কাছে এসে দু’হাত উঁচু করে দাঁড়ায় বাদামের আশায়। এখানের বাতাসে ভাসে বুনো ফুলের গন্ধ, শোনা যায় প্রচুর পাখির আলাপন। ঘন জঙ্গলের মাঝে পায়ে চলা পথে হাঁটতে হাঁটতে শুধু নিজের পায়ের শব্দ আর জঙ্গলের আদিম শব্দ যেন ফিরিয়ে দেয় বহু পুরনো দিন, ইতিহাসের দিন, জঙ্গলে বসবাসের দিন।
এই দ্বীপের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই সমুদ্রের পাথুরে তীরে, সমুদ্র এখানে খুব শান্ত। পাথুরে তীরে কল-কলাৎ শব্দে ঢেউ ভাঙ্গে এখানের সমুদ্র।
দ্বীপটি একটি কাঠের সাঁকো দিয়ে হেলসিঙ্কির মূল ভুমির সঙ্গে যুক্ত। প্রচুর সিগাল স্বাগত জানায় ভ্রমণকারীদের, ওদের কড়া নজর টুরিস্টদের আনা খাবারের দিকে। অনেকে ওদের জন্য খাবার আনে।
হেলসিঙ্কি থেকে বাসে মাত্র কুড়ি মিনিটের দূরত্বে সবুজ, শান্ত, নির্জন ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই দ্বীপ। মাঝে চলে গেছে মোরাম বিছানো রাস্তা। এই পুরো দ্বীপ একটি open air museum। প্রায় চারশো বছর পুরনো কাঠের বাড়ী সাজানো আছে এই দ্বীপে। ফিনল্যান্ডের নানান জায়গা থেকে পুরোন দিনের ফিনিস গ্রামীণ বসবাসের নিদর্শন এই দ্বীপে এনে রাখা হয়েছে।
এখানের পরিবেশে এক পুরোন ছোঁয়া, বাতাস এখানে বিশুদ্ধ। জঙ্গলের মাঝে আছে কাঠের চার্চ ‘Karuna’, নির্জন শান্ত এই চার্চ এখন মিউজিয়াম। তবে গরমের সময় অনেক অনুষ্ঠান হয় এখানে। এই চার্চে মাঝে মাঝে বিয়েও হয়। চার্চের পাশে ঘাসের জঙ্গলে দেখলাম প্রচুর জংলি স্ট্রবেরি ফলে রয়েছে, ছোট ছোট পাকা স্ট্রবেরি লাল করে রেখেছে জায়গাটা।
শুধু যে টুরিস্ট এখানে আসে তা নয়, স্থানীয় মানুষও গরমের সময়ে মুক্ত, নির্জন, প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন কাটাতে চলে আসে।
এই দ্বীপ সযত্নে চার শতকের ফিনিশ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সবুজ জঙ্গল, সরল কাঠবেড়াল, পাখি, সমুদ্র, উজ্জ্বল দিন, পাথরের তীরে সমুদ্রের পাড় ভাঙ্গার আওয়াজ ইত্যাদি নিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি দিনটা কেটে গেল।