হেলসিঙ্কির সাগর তীরের বাজার (Market Square, Helsinki)

July 2013, Finland

এসপ্ল্যানেড পার্ক যেখানে শেষ হয়েছে মার্কেট স্কোয়ারের শুরু সেখান থেকে। এই মার্কেট স্কোয়ারে লাল ইটের গোঁড়া ক্যাথিড্রালের সামনে প্রতিদিন বাজার বসে, একদিকে পার্ক অন্যদিকে বিশাল সেনেট স্কোয়ার ও আরেকদিকে বাল্টিক সাগর এই বাজারকে ছবির মতো করেছে।

DSCN3890 DSCN3745

DSCN3645 DSCN3744

পার্কের শেষে বাজারে ঢোকার মুখে এক বিখ্যাত স্ট্যাচু -ফোয়ারা Havis Amanda দাঁড়িয়ে আছে। এই ফোয়ারা তৈরি হয় প্যারিসে। এই মূর্তি বাল্টিক সাগর থেকে হেলসিঙ্কির জন্ম ও উৎপত্তির প্রতীক।

বাল্টিক সমুদ্রের তীরে এই বাজার খুবই সুন্দর। পেছনের দৃশ্যপটে লাল ইটের তৈরি গোঁড়া ক্যাথিড্রাল, পাশে সমুদ্রে ফিনিশ আরচিপিলাগো গুলোতে যাওয়ার ফেরীর আনাগোনা, ঘন নীল আকাশ, আকাশে উড়ন্ত সিগাল, ঝকঝকে রোদ দারুন এক ফিনিশ পরিবেশ তৈরি করেছে।

DSCN3961 বাজারে ঢোকার মুখেই মাছ ভাজার সুবাস পাওয়া যায়। ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ ভাজা সঙ্গে আলু ভাজা, সবজি সেদ্ধ ও কফি দিয়ে এই বাজারে দিব্যি দুপুরের খাবার হয়ে যায়। টাটকা মাছ ভাজা অনেক টুরিস্ট কিনে খাচ্ছে। এক প্লেট সামুদ্রিক মাছ ভাজা নিয়ে খেতে খেতে ফেরীতে চড়ে বসা যায়, চলে যাওয়া যায় আরচিপিলাগো গুলোতে।

DSCN3754

DSC_0483তবে একটু সাবধান না হলেই কিন্তু প্লেট থেকে সিগাল ছোঁ মেরে মাছ ভাজা নিয়ে নিতে পারে। উড়ন্ত সিগাল সর্বদা টুরিস্টদের অসাবধানতার সুযোগ খুঁজছে। এমনকি বাজারে মাছ ভাজার দোকানের উপরে আক্রমণাত্মক সিগালের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্যে মশারির মতো জাল বিছানো।

হাতের খাবারে আক্রমণ করতে ওরা এতোই বেপরোয়া যে কখনো কখনো নাকি হাতের মোবাইল ও ছিনিয়ে নেয়। কিছু কিছু সিগাল তো মশারির দেওয়াল ভেদ করে বাজারে ঢোকার রাস্তা খুঁজে নিয়েছে।

DSCN3747 DSCN3851

মরশুমি ফল- চেরি, স্ট্রবেরিতে বাজার ছেয়ে আছে। আশ্চর্য! লিটার হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় প্রত্যেক টুরিস্ট এক লিটার চেরি বা স্ট্রবেরি কিনে খেতে খেতে হাঁটছে শহরের পথে। আমারও এক লিটার চেরি কিনে সেনেট স্কোয়ারের দিকে হাঁটতে থাকলাম।

DSCN3844   DSCN3838

এই বাজারে ফল, সবজি, তাজা মাছ, মাছ ভাজা থেকে শুরু করে ফিনল্যান্ডের স্থানীয় হাতের কাজ, কাঠের কাজ, চীজ, মধু, কাপড়, টুপি, ফারের কোট, ফারের মাফলার, reindeer এর শিং দিয়ে বানানো চাবির রিং, গয়না, সুভ্যেনির, ফুল গাছ সবই বিক্রি হচ্ছে।

এখানে এই বাজারে ফিনিশ ফিশ সুপ বিখ্যাত। বাল্টিক সমুদ্রের জলো, ভালো লাগা এক ঠাণ্ডা শিরশিরে বাতাসে খোলা আকাশের নীচে বাজারে বসে ফিনিশ ফিশ সুপে চুমুক দিতে দিতে সত্যিকারের ফিনিশ স্থানীয় পরিবেশ উপভোগ করা যায়।

এখানে আমরা এপার্টমেন্ট হোটেলে থাকছি, তাই প্রতিদিনের এই বাজারের প্রতি আমার আকর্ষণ আরও বেশী। তাছাড়া, কোন এক বাজার যেন সেই জায়গার জন জীবনের এক চলমান ছবি। অল্প সময়েই যেন সেই জায়গার জীবনযাত্রার ছবি দেখি।

DSCN4566 DSCN3649 DSCN3744 DSCN3759 DSCN3811 DSCN3843 DSCN3857 DSCN4573

পাশের বাল্টিক সমুদ্রে দ্বীপে ফেরীর আসা যাওয়া, সমুদ্র-দিগন্তে Viking line এর কোন এক বিশাল ক্রুজ রাশিয়ার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছে, বাজারে টুরিস্ট সুভ্যেনির দেখে কেনা কাটি সেরে নিচ্ছে। ঘড়িতে সময় জানান দিচ্ছে দিন শেষ হয়ে আসছে। আকাশে সূর্য কিন্তু এখনও মধ্য গগনে।

ঘড়ির কাঁটা দেখে চলা ক্লান্ত বিক্রেতারা বাড়ী ফেরার টান অনুভব করছে। শেষ বেলাকার বিকি কিনি শেষে দোকানিরা গুছিয়ে নিচ্ছে নিজেদের জিনিষপত্র। জীবন থেকে একটি দিন টুপ করে ঝড়ে গেল কিন্তু আকাশের সূর্য বলছে দিন এখনও বাকি আছে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Finland, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s