ভিনদেশ ভিলিনিয়াস (Vilnius, Lithuania)

July 2013, Lithuania

এখানে রাতের অন্ধকারের রঙ ফিকে, ধূসর এক সন্ধ্যার মত রাতের রূপ। রাত সাড়ে এগারোটা, সেই ফিকে অন্ধকারের বুক চিরে Simple Express র হলুদ বাস ছুটে চলেছে তালিনিন থেকে ভিলিনিয়াসের দিকে।

আকাশে এক মায়াবী আলো। যতদূর চোখ যায় সবুজ জঙ্গল, সবুজ মাঠ। বাসের জানালা দিয়ে দেখা যায় ইস্তনিয়ার ছবির মত বাড়ী, উঁচু উঁচু গাছ আর ঘন জঙ্গলের মাঝে কোন অজানা রাস্তা মিশেছে দিগন্তে। কোন মানুষ দেখা যায় না এই রাত-সন্ধ্যায়।

সারা রাতের এই বাসে যেতে যেতে দেখে নিতে চাই- এখানের রাত নামা, তাই চোখে ঘুম নেই। জেগে জেগে দেখছি আকাশের আলো। রাত সাড়ে বারোটার দিকে একটু ঘন অন্ধকার হল। আবার তিনটে বাজতে না বাজতেই দেখি সূর্য ওঠার আগের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে আকাশে।

DSC_0695 DSC_0682 DSC_0764 DSC_0705 DSC_0762 DSC_0719

নানা ভাষী, নানা মত, নানা জাতি নিয়ে তাঁদের ইতিহাস, তাঁদের প্রকৃতি, তাঁদের সংস্কৃতি, তাঁদের বিনোদন, তাঁদের ছুটি কাটানো। এই দেশ স্বাগত জানায় ভিনদেশের সবাইকে, এঁদের শহরের জীবনযাত্রার কথা ছড়িয়ে দিতে চায় পৃথিবীর কোণে, কোণে। ঐতিহাসিক মধ্যযুগের রহস্যময়তা এই শহরের আনাচে কানাচে। যদিও লিথুয়ানিয়ার রাজধানী শহর, একদিকে আধুনিক শহরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে কিন্তু পুরনো এই শহরের শরীরে জড়িয়ে আছে অজানা কত কাহিনী। তাই UNESCO এই শহরকে World Heritage Site ঘোষণা করেছে।

যখন পৌঁছলাম, এই শহরের রাতের ঘুম তখনও কাটে নি, সবে আড়মোড়া ভাঙছে। ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে, আমরাই শুধু টুরিস্ট, বাকি সবাই এখানের স্থানীয় মানুষ। টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার এখনও খোলে নি, বাস স্টপে ম্যাপ নিয়ে শুরু হল এই শহর আবিষ্কারের পালা।

DSC_0857 DSC_0852 DSC_0842 DSC_0831 DSC_0821 DSC_0811

হাঁটতে শুরু করলাম, সত্যি এক অদ্ভুত দেশ। খালি রাস্তা ঘাট, ইউরোপের অন্যান্য শহর অনেক ভোরেই জেগে যায়। কিন্তু, এই শহরের বুকে এক গম্ভীর নির্জনতা জড়িয়ে আছে। প্রচুর চার্চ এই শহরকে যেন গোঁড়া ও ধর্মীয় করেছে। বাড়ী ঘরের মধ্যেও সেই গম্ভীর ভাব নজরে পড়ে।

ম্যাপ দেখে দেখে এদিক সেদিক হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম Subačiaus Street। এই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সামনে এক অপরূপ দৃশ্য। পুরো শহরকে এক উঁচু জায়গা থেকে দেখা যায় এই রাস্তার শেষে। যেন কোন এক শিল্পির তুলিতে আঁকা এই শহর। ঘন সবুজ এই শহরের দৃশ্যপট- দূরে দেখা যায় Three cross পাহাড়, Gediminas Castle, লাল ইটের তৈরি St. Anne’s Church আর church of the Bernardine, সাদা Vilnius Cathedral এর চূড়া। ঘন সবুজ ছবির মত এই শহরের দৃশ্য আর সকালের হলুদ নরম আলো যেন এক স্বপ্নপুরীতে নিয়ে গেছে।

সকালের জনহীন শহরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে এক ভদ্রমহিলা দেখলাম, ভাবলাম জিজ্ঞেস করি কোন রাস্তা ধরে হাঁটলে সহজে Three cross পৌঁছন যাবে। সামনে এলে তিনি আমাদের কাছে পয়সা চাইলেন। ভাষা তো জানি না কিন্তু তিনি হাত পেতে বললেন ‘মানি’।

DSC_0770-001 DSC_0745

যাইহোক, এগিয়ে চললাম। Three Cross জঙ্গলে ঘেরা এক পাহাড়ের উপরে তিনটে বিশাল ক্রস। জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়ে পৌঁছনোর জন্যে ছোট পিচ ঢালা রাস্তা আছে কিন্তু সেই পথে প্রচুর সময় নেবে। দেখলাম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলের মধ্যে মানুষে চলা ছোট পথ তৈরি হয়েছে, সময় বাঁচাতে সেই পথ ধরেই চললাম। উপরে পৌঁছে অপূর্ব দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে গেল।

DSCN4162

গরমের এই সময় এখানের ঘন সবুজ সত্যি প্রান জুড়িয়ে দেয়। এই দেশের মাটি খুব উর্বর, প্রচুর গাছ তাই পান্নার হারের মত এই শহরকে জড়িয়ে আছে।

ধীরে ধীরে শহর পুরোপুরি জেগে গেল। দেখলাম রাস্তায় টুরিস্ট ইনফরমেশনের লোক ‘আই’ ছাপ জামা পড়ে ঘুরছে।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম আর কি কি দেখা যায়। সে জানাল আজ এখানের ‘Statehood Day’ । তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে প্যারাড, স্থানীয় মানুষেরা স্থানীয় জামা কাপড় পড়ে শহর প্রদক্ষিণ করবে।

DSC_0869DSC_0850DSC_0827DSC_0811DSC_0810DSC_0729

দুপুরের দিকে ক্যাথিড্রাল স্কোয়ারে ও পার্লামেন্ট স্কোয়ারে প্রচুর স্থানীয় মানুষ জড়ো হয়েছে জাতীয় দিবস উপলক্ষে। ভোরের এই ঘুমন্ত শহরকে উৎসবের আনন্দে জেগে উঠতে দেখলাম দুপুরে। সাক্ষী রইলাম ২০১৩ সালের লিথুয়ানিয়ার জাতীয় দিবসের।

স্বপ্ন-সুন্দর, ঐতিহাসিক, পান্না-সবুজ এই দেশের স্মৃতি ক্যামেরা বন্দি করে এবার ফিরে আসার পালা। হয়তো অনেকদিন পরে পৃথিবীর কোন এক কোণায় কোন এক পড়ন্ত দুপুরে এই শহরের স্মৃতি চারণ করবো।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Lithuania, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s