স্পেনের ক্যাটালুনিয়া অঞ্চলের এই আশ্চর্য পাথুরে সৌন্দর্যের দেশে কেউ আসে মন সারাতে, কেউ আসে ধর্মের খোঁজে – কালো ম্যাডোনার কাছে, কেউ আসে শুধুই প্রকৃতির টানে – রুক্ষ পাহাড় জঙ্গলের টানে, কেউ আসে উঁচু নিচু পাহাড়ি পথে হাঁটার আনন্দে, কেউ বা আসে এই আদিম পাথুরে পাহাড়ে ভোরের সূর্যদোয় দেখার টানে। তবে যে যেই কারনেই আসুক না কেন মন্সেরাতের পাহাড় তাঁর জীবনে এক চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়েই থেকে যাবে।
এখানের পাহাড়ের নীচের Santa Maria de Montserrat এর বেসিলিকায় প্রতিদিন সুরেলা সুর ধ্বনি শোনা যায়, শোনা যায় প্রাচীন মনেস্টারির ঘণ্টা ধ্বনি। আর পাথুরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সেই সুরের প্রতিফলন হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
বিশাল পাহাড়ের গায়ে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি নানা গড়নের বিশাল বিশাল পাথর এক এক মূর্তি ধারন করেছে, দূর থেকে দেখে আমার কখনো মনে হল গনেশের এক বিশাল অবয়ব, হাঁটতে হাঁটতে অন্য দিকে গিয়ে আবার সেই পাথুরে মূর্তিই যেন অন্য রূপ নিয়ে নেয়। এখানে এসে সহজেই প্রাগৈতিহাসিক জুঙ্গুলে অদ্ভুত সৌন্দর্য অনুমান করা যায়, পাহাড়ের বিশাল পাথরে সহজেই কল্পনা করে নেওয়া যায় নানা ধরণের প্রতিকৃতি, যেন পাহাড়ের গায়ের বিশাল বিশাল পাথর নিয়ে কোন এক সর্বশক্তিমান অবহেলায় ভাস্কর্য তৈরি করেছে। Montserrat স্পেনের প্রথম ন্যাশনাল পার্ক। এই অঞ্চল শুধু যে পাহাড়ি সৌন্দর্যের জন্যে বিখ্যাত তা নয়, এই অঞ্চল খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্ম স্থল।
বার্সিলোনা থেকে ট্রেনে যখন মন্সেরাতের দিকে আসছিলাম দূর থেকে সারি সারি পাথুরে পাহাড়ের শ্রেণী দেখে মনে হয়েছিল এ কোন আদিম জঙ্গলের দেশে এলাম, কিন্তু যতই কাছে পৌঁছই এক বিস্ময় যেন অপেক্ষা করেছিল। ট্রেন পৌঁছে দিয়েছিল Santa Maria de Montserrat বেসিলিকার প্রায় দোরগোড়ায়। সেখানে মিউজিয়াম, ছোট্ট সুভেনির শপ, মনেস্টারি, খাবারের দোকান – সব মিলিয়ে এক ছুটির আমেজ এখানের মানুষের মধ্যে।
মনেস্টারির চত্বর থেকে পাহাড়ি পথ ধরে ফুনিকুলার চলে গেছে একদম পাহাড়ের চূড়ায় Sant Joan এ। ফুনিকুলার ধরে একদম উপরে পৌঁছে পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটা, উপর থেকে ক্যাটালুনিয়া অঞ্চলের গ্রাম্য সৌন্দর্যে অভিভূত হওয়াই যে এই ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ। অনেকেই সারা রাত ধরে পাহাড়ি পথে হেঁটে উপরে পৌঁছে সূর্যোদয়ের অপেক্ষা করে।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি নির্জন পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে অদ্ভুত সৌন্দর্যে কখনো কখনো থমকে দাঁড়িয়ে যেতেই হয়। নির্জনতারও বুঝি বা এক শব্দ আছে, পাথুরে পাহাড়ে আছড়ে পড়ে কোন এক নাম না জানা পাখির তীক্ষ্ণ শিস, বিশাল এই পাহাড় শ্রেণীর বুকে সেই নির্জনতার শব্দ, জঙ্গলের আদিম শব্দ কান পেতে শুনতে শুনতে, বিশালতাকে অনুভব করতে করতে কখন যে ফেরার সময় হয়ে যায় বুঝি না।