এই পৃথিবীর বুকে নশ্বর মানুষ কত রকম ভাবেই না অবিনশ্বর দাগ কেটে গেছে, মানুষটি নেই কিন্তু তাঁর জীবন কালের চিন্তাধারা, তাঁর সৃষ্টির মাঝে রয়ে গেছে পৃথিবীর বুকে। কেউ এঁকে গেছে অনবদ্য ছবি, কেউ সৃষ্টি করেছে নতুন স্থাপত্য শিল্প, কেউ আবিষ্কার করে গেছে বিজ্ঞানের নানা নিয়ম, সূত্র। যতদিন পৃথিবীর বুকে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে সেই সৃষ্টি রয়েই যাবে। ইউরোপে এসে অতীতের মানুষের যত সৃষ্টিরই মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি, বিমোহিত হয়েছি, বিস্ময়ে বাকরোধ হয়েছে।
Antoni Gaudí সেই নশ্বর মানুষদের মধ্যে একজন যে কিনা বার্সিলোনার বুকে নিজের কল্পনা, চিন্তা, স্বপ্নকে একে একে রূপ দিয়ে গেছেন স্থাপত্যের আকারে। এখানে Gaudí র স্বপ্নের বিচরণ ভূমি কিংবা ক্যানভাস শহরের বিল্ডিং, চার্চ, পার্ক। প্রতিটি স্থাপত্যে Gaudí র অদ্ভুত কল্পনা শক্তির প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর সৃষ্টির প্রেরণা প্রকৃতি, তাই তাঁর স্থাপত্যে প্রকৃতি ঘুরে ফিরে এসেছে, তাঁর স্থাপত্যে অনেক সাধারণ জিনিস ব্যবহার হয়েছে। এমনকি ভাঙ্গা, টুকরো সেরামিক দিয়ে বিল্ডিং তৈরিতে এক নতুন ধরণের টেকনিক ব্যবহার করেছেন Gaudí ।
স্থাপত্য শিল্পে তখনও neo-Gothic art ও Oriental techniques এর প্রভাব ছিল, তবে AntoniGaudí র সময়ে স্পেনে Modernisme বা Art Nouveau স্টাইল স্থাপত্যের চূড়ান্ত সময় ছিল। Modernisme এর ফল স্বরূপ, আজও স্পেনে Gaudí র এক একটি মাস্টারপিস দেখা যায়।
বার্সিলোনার Passeig de Gràcia রাস্তার মোড়ে এসে Antoni Gaudí র সৃষ্টির সম্মুখীন হয়ে আর্কিটেকচারের ছাত্র না হয়েও বেশ চিন্তায় পড়তে হয় – ভাবতে হয় বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে আছে কি করে?
Gaudí র কাজের এক মাস্টারপিস বিল্ডিং Casa Batlló বা স্থানীয় নাম Casa dels ossos মানে House of Bones। এই বিল্ডিঙের গঠনশৈলীতে যেন মানুষের হাড়ের এক অদ্ভুত মিল দেখা যায় – তাই বোধহয় স্থানীয় নাম হাড়ের ঘর। সারা বিল্ডিঙের কোথাও কোন সরল রেখা নেই, এতো আঁকা বাকা এর প্রতিটি থাম, জানালা, দরজা – অদ্ভুত লাগে। হয়তো Gaudí সচেতন ভাবে বিল্ডিং তৈরিতে সরলরেখাকে এড়িয়ে গেছেন। বিল্ডিঙের ছাদ আবার ড্রাগন বা ডাইনোসরের পিঠের আদলে তৈরি। সবাই ঘাড় উঁচু করে এই অদ্ভুত বিল্ডিঙের খুঁটিনাটি দেখতে দেখতে নিজেদের ভাষায় বিস্ময় প্রকাশ করে চলেছে।
আজও এই বিল্ডিং এ বার্সিলোনা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হয়, অতি যত্ন সহকারে প্রতিটি রঙিন কাঁচের যত্ন নেয় বার্সিলোনার সরকার। ওরা জানে Gaudí র মতো শিল্পী ওরা একবারই পেয়েছে। Gaudí র মত মহান শিল্পীরা ওদের কর্মের মাঝেই নির্বাণ লাভ করে। এক বার পৃথিবীতে এসেই যা কাজ করে যায় ওরা, বার বার পৃথিবীতে ফিরে আসার আর দরকার পড়ে না।