বার্সিলোনায় এসে Antoni Gaudí র কল্পরাজ্য বা রূপকথার রাজ্য Park Güell এ উঁকি না দিয়ে উপায় নেই। এখানে Gaudí র স্বপ্ন – কল্পনার চারণ ভূমি এক পাহাড়, যে পাহাড় এক কালে ছিল রুক্ষ, পাথুরে, রিক্ত, শুষ্ক। কিন্তু, Gaudí র অলীক কল্পনা সেই পাহাড়কেই বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় করেছে, সবুজ করেছে – আজ বার্সিলোনার এক অন্যতম টুরিস্ট গন্ত্যব্য Gaudí র সৃষ্টি Park Güell। স্পেনের এক বিখ্যাত ইন্ডাস্টিয়ালিস্ট Eusebi Güell এর নামে তৈরি এই পার্কে Gaudí তাঁর কল্পনার পঙ্খিরাজকে লাগামছাড়া করেছেন, দিয়েছেন উন্মুক্ত প্রাঙ্গন, আজ Gaudí র এই কল্পরাজ্য UNESCO World Heritage Site।
প্রকৃতি ছিল তাঁর কাজের প্রেরণা, El Carmel পাহাড়ের উপরে Park Güell ঢুকতেই সারি বাঁধা পাথুরে থামের রাস্তা স্বাগত জানায়। সারি সারি পাথরের থাম অদ্ভুত উপায়ে দাঁড়িয়ে – অনেক থামই হেলানো। সেই পাথুরে পথ নিয়ে যায় পাহাড়ের একদম চূড়ায়। উপরে পার্কের পাথুরে বেলকনিতে দাঁড়ালে এক ঝলক তাজা হাওয়ার সঙ্গে দেখা যায় বার্সিলোনা শহরের দিগন্ত রেখা, দূরে দেখা যায় Montjuïc পাহাড় এলাকা, তাঁর আরেক বিখ্যাত সৃষ্টি Sagrada Família র চূড়া। Gaudí এখানে জীবনের অনেকদিন ছিলেন, তাঁর বাড়ী আজ Gaudí মিউজিয়াম ও তাঁর কাজের সংগ্রহশালা।
এই পার্কের প্রধান আকর্ষণ বিশাল বিশাল থামের উপরের ছাদ, টুকরো টাইলসের কারুকাজ করা আঁকাবাঁকা রেলিং – মনে হয় বিশাল এক সরীসৃপ যেন গা এলিয়ে পড়ে আছে। ছাদের নীচে দাঁড়ালে স্বভাবতই উপরে চোখ যাবেই – ছাদে অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ – সূর্যের আদলে অদ্ভুত সুন্দর এক ছাদ শিল্পের নমুনা দেখে ক্যামেরায় চোখ রাখতেই হয়।
এই পার্কে দু দিক দিয়ে ঢোকা যায়, একদিক যদি স্বাগত জানায় পাথুরে পথ দিয়ে আরেক দিক স্বাগত জানায় রূপকথার রাজ্যে। এই দিকে অদ্ভুত সুন্দর ছোট্ট দুই বিল্ডিং – এক বিল্ডিংকে দূর থেকে দেখে মনে হয় চকোলেট দিয়ে তৈরি, বিশাল স্যালাম্যান্দারের প্রতিকৃতি যাকে এখানের মানুষ el drac বা the dragon নামে জানে, ফোয়ারা, ফুল বাগান, রঙিন টাইলসের কারুকাজ, উজ্জ্বল দিন, নিশ্চিন্ত মানুষের ভ্রমণ বিলাস – সব মিলিয়ে এক রূপকথার রাজ্যের নিশ্চিন্ত ছবিই ফুটে ওঠে। যে ছবি হয়তো Antoni Gaudí বহুকাল আগেই মানস চক্ষে দেখে ছিলেন। এখানের প্রতিটি জিনিস অতি সাধারণ ভাবে প্রকৃতি থেকে উঠে এসেছে, কিন্তু সেই সাধারণই এক অসাধারণ আবেদন সৃষ্টি করেছে। এক রুক্ষ পাহাড়ের প্রতিটি অংশকে এই ভাবে সাজিয়ে দেওয়া, তার ভবিষ্যৎ রূপ দেখাকেই বোধহয় দূরদর্শিতা বলে।