অনেকেরই জীবনের প্রথম কেনা ঘড়িটি হয়তো ছিল – এইচ এম টি। একটা ঘড়ি – অথচ কতো স্মৃতি বিজড়িত। দাদু, বাবা – এরা কেউই নেই কিন্তু ওদের ঘড়ি গুলো এখনো আছে। মানুষের স্মৃতি বয় এই ঘড়ি, জীবনের সঙ্গে কতো ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল ঘড়ি – এখনকার মতো তো আর তখন মোবাইল ছিল না, ছিল না ডিজিটাল ঘড়ি। ছেলেবেলায় কত দিন বাবাকে দেখেছি নিয়ম করে নিজের ঘড়িতে দম দিতে। তখন একটা ঘড়ি পড়া ছিল কতো বিলাসিতা, এখন কতো সাধারণ হয়ে গেছে ঘড়ি, সস্তা থেকে সস্তা, দামী থেকে দামী ঘড়িতে বাজার ছেয়ে গেছে। ফ্যাশন সচেতন আমরা হাল ফ্যাশনের সঙ্গে চলতেই পছন্দ করি। এখন বাজারের হাজার নামী দামী দেশি বিদেশী ঘড়ির ভিড়ে ভুলেই গেছি আমাদের দেশের এক ঘড়ির কোম্পানি ছিল – এইচ এম টি (hmt) ।
মনে পড়ে – মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায়, বাবা হাতে একটা নতুন ঘড়ি বেঁধে দিয়ে বলেছিল – কাল পরীক্ষায় ‘সময়’ দেখতে কাজে লাগবে। সেদিন বোধহয় মাধ্যমিক পরীক্ষার চিন্তা ভুলে গিয়ে ঘড়িটির মধ্যেই ডুবে গিয়েছিলাম।
তারপর তো কতো ঘড়ি এসেছে বাজারে, এখন তো ঘড়ি পড়া ছেড়েই দিয়েছি। ঘড়ির কথা ভুলেই ছিলাম, হঠাৎ এক খবরে মনে পড়ল ঘড়ির কথা। এইচ এম টি কোম্পানি বন্ধ হতে চলেছে, এক যুগ শেষ হতে চলেছে। কতো দেশি বিদেশী ছোট বড় কোম্পানি তো প্রতিদিন বন্ধ হচ্ছে, নতুন কোম্পানি খুলছে – কিন্তু, এই খবরে এক ঝটকায় আমার মন অতীতের গলিতে উঁকি দিল – সত্যি তো জীবনের কতো মানুষের সঙ্গে যে এই কোম্পানির ঘড়ির স্মৃতি জড়িয়ে আছে, দেশের কত মানুষের ভালো-খারাপ, আবেগ ঘন সময়ের সঙ্গী ছিল এই কোম্পানির ঘড়ি।
স্বাধীন ভারতের পথ চলায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে, স্বাধীন ভারতবাসীকে সময়ের মূল্য বুঝিয়ে দিতে যে কোম্পানির সূচনা, আজ পুরনো সেই মানুষ গুলোর মতো ঘড়ির কোম্পানিই হারিয়ে যাচ্ছে! এক অদ্ভুত কষ্ট হল, মুহূর্তেই মনে হল একটা এইচ এম টি ঘড়ি কিনে নিতে হবে। অদ্ভুত ভাবে দেখি – অনলাইন বাজারে একটাও এইচ এম টি ঘড়ি নেই, সবই বিক্রি হয়ে গেছে! মনে হয়, এই কোম্পানি বন্ধের খবর শুনে অনেকেই নস্টালজিক হয়ে, আবেগ প্রবণ হয়ে একটা এইচ এম টি ঘড়ি নিজের সংগ্রহে রাখতে চাইছে, স্বদেশী এক চিহ্ন নিজের কাছে রাখতে চাইছে, সবাই মনে হয় ঘড়িটি নিজের কাছে রেখে বিদায় সম্ভাষণ জানাচ্ছে। এইচ এম টি ঘড়ি যেন বিদায়ের আগে আমাদের দেশের ঘরে ঘরে নিজের শেষ চিহ্ন টুকু ছেড়ে যেতে ভুলছে না। বিদায় এইচ এম টি বিদায়, তবে পারলে আবার নব জন্ম নিয়ে ফিরে এসো ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে।